সাতক্ষীরায় টানা বর্ষনে অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১৫০ হেক্টর বীজতলা এবং ৫০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষের জমি ও বীজতলা ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কুষকরা। ফলে ভরা মৌসুমে রোপা আমনের চারার সংকট দেখা দিতে পারে। এদিকে নতুন করে পানি বাড়ায় দূর্ভোগ বেড়েছে শহরের নিম্মাঞ্চলে বসবাসকারি জনসাধারণের। টানা বর্ষণে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৮৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল। এরই মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে রোপণ সম্পন্ন হলেও ভারী বৃষ্টিপাতে অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১৫০ হেক্টর জমির বীজতলা এবং ৫০০ হেক্টও জমির গ্রীষ্মকালীন সবজিক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪ থেকে ৫ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার কৃষক ইউনুচ আলী জানান, প্রতিবছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে তিনি রোপা আমন ধানের চাষ করেন। ইতিমধ্যে অর্ধেক জমিতে ধানের চারা রোপন করা হয়ে গেছে। বাকি জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকায় চারা রোপন করতে পারছেন না। এছাড়া পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একইসাথে রোপন করা পাঁচ বিঘা জমির ধানের চারাও প্রায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার মত। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে আগামী ২/১দিনের মধ্যে সবটাই পানিতে ডুবে যাবে। ফলে নতুন করে আবার রোপন করতে হলে আমনের চারার সংকট দেখা দিতে পারে। তিনি বিলের পনি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সদর উপজেলার যুগরাজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ২০ বিঘা জমিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এর মধ্যে আট বিঘায় চারা রোপণ শেষ হলেও সব জমি এখন তিন-চার ফুট পানির নিচে। চাষের জমি পানিতে ডুবে থাকায় সেখানে ধানের চারা রোপন করা যাচ্ছে না। বিলের মধ্যে খাল উন্মুক্ত না থাকায় পানি নামছে না। রোপা আমন আর সবজিখেত ডুবে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে শুধু কৃষকরাই নয়, চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষও। বৃষ্টি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের নিম্মাঞ্চলে নতুন কওে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
শহরের কামালনগর এলাকার ভ্যান চালক ফজর আলী জানান, বর্ষা শুরু কিছুদিনের মধ্যে পুরো কামালনগর এলাকার নিম্মাঞ্চল পানিতে ডুবে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কয়েকদিন আগে পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলেও ফের বৃষ্টি বাড়ায় আবার সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পানি জমে রাস্তাঘাট ডুবে গেলে আমরা ভ্যান নিয়ে বের হতে পারি না। সারাদিন ভ্যান না চালাতে পারলে সংসার চলে না। টানা বৃষ্টি হলে যেন জীবনটাই থমকে যায়।
নগরঘাটা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, চার বিঘা জমিতে চাষ করা ঢেঁড়স, বরবটি, পটোল, ওল, মুখীকচুসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার সবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বর্ষা কমলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। মাছখানে অনেক টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হতে হলো আমাকে।
স্থানীয় কৃষক ও নাগরিকদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো বিলের খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া ও সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব। তারা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা ছাড়া এ ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১৫০ হেক্টর বীজতলা ও ৫০০ হেক্টর সবজি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব নির্ধারণে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
খুলনা গেজেট/এএজে