শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

নড়াইলে ক্লিনিকের ওটি সিলগালা, সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নড়াইল

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার গুরুতর অভিযোগে মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্লিনিকের সার্বিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল হাসনাতের নেতৃত্বে সিএন্ডবি চৌরাস্তায় অবস্থিত ক্লিনিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ সময় তিনি ওটি সিলগালা এবং ক্লিনিকের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। উপস্থিত ছিলেন ইপিআই প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী প্রসান্ত ঘোষ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, লোহাগড়া উপজেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বাপ্পিসহ অন্যান্যরা।

ডা. আবুল হাসনাত জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ক্লিনিকটি পরিদর্শনে গিয়ে নানাবিধ অনিয়ম পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে— ২০২২ সালের জুনে ক্লিনিকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক না থাকা, ডিপ্লোমাধারী সেবিকা না থাকা এবং বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা। এসব কারণে ওটি সিলগালা ও ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত চিকিৎসককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের অপারেশন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইতনা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাংখারচর গ্রামের শওকত মোল্যার বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী সুমি খানম সন্তানসম্ভবা হওয়ায় গত ২২ নভেম্বর ভোরে পরিবার তাকে মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেওয়াজ মোর্শেদ, আল খাদিজা সম্পা ও ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরা ১৩ হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নিলেও পরবর্তীতে সুমির পেট ফুলে যায় এবং অসুস্থতা বাড়তে থাকে।

চিকিৎসকদের জানালেও তারা এটিকে ‘গ্যাসের ব্যথা’ বলে উল্লেখ করেন এবং ২৭ নভেম্বর ছাড়পত্র দেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ৪ ডিসেম্বর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সুমিকে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়— সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর পেটের নাড়ি কেটে যায়,এবং তা জেনেও চিকিৎসকরা গজ দিয়ে চেপে সেলাই দিয়ে দেন। এতে পেটে পচন ধরে গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়।

এ ঘটনায় রোগীর ফুফাতো ভাই এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নড়াইল জেলার সাবেক মুখ্য সংগঠক কাজী ইয়াজুর রহমান বাবু ৯ ডিসেম্বর নড়াইল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন