রবিবার । ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ । ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
বিস্তর এলাকার নিরাপত্তায় ৮০ কারারক্ষী!

খুলনার নতুন কারাগার চালু হলেও দক্ষ জনবলের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার নতুন কারাগার চালু হলেও ২২ দিনে স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র ১৪০ কয়েদি। দক্ষ জনবলের অভাবে খুলনা নতুন কারাগার কার্যত অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৮০ জন কারারক্ষী দিয়ে কারাগারের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দক্ষ জনবল সংকটের কারণে সেখানে বাকী হাজতি এবং কয়েদিকে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ধাপে ধাপে আরও কয়েদিদের নেওয়া হবে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো. মুনির হুসাইন খুলনা গেজেটকে জানান, পুরাতন জেলখানায় বর্তমানে মোট ১ হাজার ৩৯ জন বন্দি রয়েছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ২৮০ জন এবং ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ৩৬ জন আসামি রয়েছে। বাকি সব হাজতি। এর আগে ১ নভেম্বর ১০০ জন কয়েদিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ১৫ নভেম্বর ৪০ জন আাসমিকে পুরাতন থেকে নতুন করাগারে নেওয়া হয়। নতুন জেলখানা নির্মাণে যে ধীর গতি ছিল তার ধারাবাহিকতা পড়েছে কয়েদি স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে!

কারা সূত্রে আরও জানা গেছে, পুরাতন কারাগারে ৬৭৮ জন থাকার কথা থাকলেও সেখানে হাজারের ওপর বন্দি রয়েছে। স্বল্প স্থানে উল্লেখিত পরিমাণ আসামি পাহারা দেওয়ার জন্য ১৫০ জন কারারক্ষী রয়েছে। পক্ষান্তরে নতুন কারাগারে ১৪০ জন আসামি পাহারা দেওয়ার জন্য ৮০ জন কারারক্ষী নিয়োজিত করা হয়েছে। আসামি সংখ্যা বাড়তে থাকলে এই সংখ্যক রক্ষী দিয়ে নতুন কারাগারের নিরাপত্তা বিধান করা খুবই কঠিন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য দক্ষ কারা রক্ষীর প্রয়োজন।

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, “বিস্তর এলাকা নিয়ে নতুন কারাগারের কার্যক্রম চালু হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার আসামি এবং হাজতি সংখ্যা কম। ৮০ জন নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে নতুন কারাগারের কার্যক্রম চলছে। পরবর্তীতে সেখানে হাজতি এবং কয়েদির সংখ্যা বাড়লে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।”

জেলার মুনীর হুসাইন বলেন, উদ্বোধনের প্রথম দিনে ১০০ জন কয়েদি এবং ১৫ নভেম্বর ৪০ জন কয়েদিকে নতুন কারাগারে নেওয়া হয়েছে। কাল আরও কিছু কয়েদিকে নেওয়া হবে। তাছাড়া সম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের কারণে অতি দ্রুত আসামিদের নতুন কারগারে নেওয়া হবে। বড় কোন দুর্যোগ না হলে এ সপ্তাহের মধ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দি বাদে বাকী বন্দিদের নতুন কারাগারে নেওয়া হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে এ সপ্তাহ থেকে জেলার ৯ টি থানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের সকলে নতুন কারাগারে নেওয়া হবে। তারা আর পুরাতন কারাগারে আসবে না। পুরাতন কারাগারের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।

আসামিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি জানান, ১৪০ জন কয়েদির জন্য ৮০ জন নিরাপত্তা রক্ষী এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হাজারের উর্ধে থাকা পুরাতন কারাগারে আসামিদের জন্য রয়েছে ১৫০ জন। কয়েদি এবং হাজতি স্থানান্তরের সংখ্যা বাড়তে থাকলে নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ৮০ জন নিরাপত্তা রক্ষীর মধ্যে ৪৭ জন নতুন এবং ৩৩ জনকে অন্য কারাগার থেকে আনা হয়েছে। ১০ জনকে ট্রেনিংয়ের জন্য রাজশাহীর কারা পশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়েছে কারা প্রশাসন। তাদের ট্রেনিং প্রায় শেষের পথে। খুব শিগগিরই তারা নতুন কারাগারে রক্ষীদের সাথে যুক্ত হবেন। নতুন কারাগারের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানে দক্ষ কাররক্ষীর প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ভৈরব নদের তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দিদের। তাই খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। তবে আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন