বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই বোনের চমক

মোহাম্মদ মিলন

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোসাঃ ফিরোজা খাতুন ও তার ছোট বোন মোসাঃ সোনিয়া খাতুন। তারা দুই বোন খুলনার পিএইচটি সেন্টারের নিবাসী। এবারের এইচএসসিতে চমক দেখিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই দুই বোন। খুলনার দৌলতপুর মুহসীন মহিলা কলেজ থেকে অংশ নেন তারা। তাদের স্বপ্ন শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান করানো। গতকাল বৃহস্পতিবার ফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা।

এবার এইচএসসি’র ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও তাদের সফলতায় খুশি পিএইচটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও সহপাঠীরা। বাঁধা থাকলেও নিজেদের মেধায় এগিয়ে রয়েছেন তারা। এবারের এইচএসসির ফলাফলে দুইজনই পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড। দু’জনই জানালেন তাদের স্বপ্নের কথা।

বড় বোন ফিরোজা খাতুন বলেন, খুলনার পিএইচটি সেন্টারে প্রথম শ্রেণিতে আমি ও আমার ছোট বোন ভর্তি হয়েছিলাম। ১৩ বছর ধরে এখানেই রয়েছি আমরা। একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। দৌলতপুর মুহসীন মহিলা কলেজ থেকে দুইজনই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। ফলাফল পেয়েছি। আমি এবার ৪ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছি। আর ছোট বোন সোনিয়া ৪.৬৭ পয়েন্ট পেয়েছে। আমরা দুইজনই ‘এ’ গ্রেড পেয়েছি। নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষক হতে চাই। শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধী ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া শেখাবো।

ছোট বোন সোনিয়া খাতুন বলেন, এবার এইচএসসিতে পাশের হার কমেছে। আরও ভালো করা সম্ভব হতো যদি সবধরনের সুবিধা থাকতো। বিশেষ করে বেইল পদ্ধতির বইগুলো থাকলে। আইসিটি, বাংলা ও ইংরেজি বেইল পদ্ধতির বই ছিল। বাকীগুলো শুনে শুনে মুখস্ত করতে হতো। পরীক্ষায় আমি বলেছি এবং একজন শ্রুতি লেখক সেটা লিখেছে। ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও আমরা দুই বোন ভালো রেজাল্ট করেছি। এতেই আমরা খুশি।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে পিএইচটি সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমরা দুই বোন একইসঙ্গে লেখাপড়া করতাম। সেখানকার শিক্ষকরা আমাদের খুব বেশি সহযোগিতা করেছেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলায় হলেও ২০১৬ সালে বাবা-মা দু’জনই কাজের জন্য ভারতে গিয়েছেন। এখনও তারা সেখানেই রয়েছেন। নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। রেজাল্ট পেয়েই তাদের জানিয়েছি। তারা খুবই খুশি। এখন স্বপ্ন পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাড়ানো। প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া শিখানো। এ জন্য শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।

শুধু ফিরোজা আর সোনিয়াই নয়, এইচএসসিতে অংশ নেওয়া পিএইচটি সেন্টারের অংশ নেওয়া শতভাগ দৃষ্টি ও বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাদের দুই জনের সঙ্গে এবারের এইচএসসিতে পাস করেছে বাক প্রতিবন্ধী শাম্মী আক্তারও। তিনি কথা বলতে ও শুনতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে ইশিরায় কথা বলেন। একইসঙ্গে লিখে নিজের কথা জানাতে পারেন। কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় ইশারায় প্রশ্ন করা হয় শাম্মীকে। তিনি লিখে ও ইশারায় তার উত্তর দেন।

শাম্মী জানান, বাবা ফরিদপুরের ছালাম শেখ এবং মা জাহানারা বেগম। এবারের পরীক্ষায় পাশ করে তিনি খুব খুশি। খুলনার গোয়ালখালি পিএইচটি সেন্টারের ৫ জন নিবাসী এবারের এইচএসসিতে অংশ নিয়ে পাস করেছে।

এছাড়া পিএইচটি সেন্টারের নিবাসী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ময়না খাতুন রুনা জিপিএ ৩.৭৫ ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী মিতু ৩.০৪ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছে।

খুলনার গোয়ালখালী পিএইচটি সেন্টারের সহকারি তত্ত্বাবধায়ক নার্গিস আক্তার বলেন, আমাদের এখানকার নিবাসী ফিরোজা ও সোনিয়া দুই বোন খুবই ভালো ফলাফল করেছে। এবারের এইচএসসিতে অংশ নেওয়া ৫ জনই একসঙ্গে পাস করেছে এতে আনন্দিত, রেজাল্ট পেয়ে আমরা খুশি।

খুলনার গোয়ালখালী পিএইচটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক ও সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বাক শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এটাকে পিএইচটি সেন্টার বলা হয়। এ বছর এখানকার ৫ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ৩জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও ২ জন বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩ জনের মধ্যে ২ জন ‘এ’, একজন ‘এ মাইনাস’ এবং বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধী দুই জনের একজন ‘বি’ ও একজন ‘সি’ গ্রেড পেয়ে পাস করেছেন। তবে তারা যে পদ্ধতিতে এখানে কাজ করে বাহিরে সেই পদ্ধতির সুবিধা পায় না। যে কারণে লেখাপড়ায় সমস্যাই পড়তে হয়। কিন্তু তবুও এবার শতভাগ পাস করেছে। এতে আমরা আনন্দিত।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন