বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

বোঝা টেনে সংসার চলে বৃদ্ধ পরিমলের

পাইকগাছা প্রতিনিধি

গরু না হয়েও দুই গরুর সমান বোঝা টানেন জীবন যুদ্ধে হার নামানা বৃদ্ধ পরিমল মন্ডল (৭০)। প্রায় দুই দশক ধরে এই কাজ করে ৪ জন সদস্য সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউপির কাটিপাড়া গ্রামের পরিমল কৈশোর বয়সেই পিতা মৃত অধির মন্ডলের কাছে গরুর গাড়ি চালানোর হাতেখড়ি হয়। সাংসারিক অনটনে পড়ালেখা বেশিদুর এগোতে না পারলেও পিতার সাথে থেকে হয়েছেন দক্ষ গাড়িয়াল। এলাকায় অনেকেই তাকে পরিমল গাড়িয়াল নামে চেনেন।

পরিমল মন্ডল জানান, প্রায় ৫৫ বছর আগে পিতার সাথে গরু গাড়িতে মালামাল বহন করে সংসারের হাল ধরতে হয়। তখন রাস্তা পাকা ছিলনা। মেঠ পথে মালবাহী গরুর গাড়ি চালাতে হতো। বর্ষাকালে কাদায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হত। পিতা বৃদ্ধ হলে আমি গাড়িয়াল হয়ে প্রায় ৩৫ বছর একাজ করছি। এখন রাস্তা পাকা হয়েছে। হয়েছে গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি ফলে গরু দিয়ে গাড়ি টানা ও সংসার চালানো খুবি কষ্ট হচ্ছিল। সেকারণে গরু বিক্রি করে গরুর গাড়ির কাঠের চাকা পরিবর্তন করে ব্যারিং লাগিয়ে ঠেলা গাড়ি বানিয়ে নিয়েছি। নিজেই দুইটা গরুর সমান পরিশ্রম করে গাড়ি ঠেলে সংসার চালাতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় নৌকায় মালামাল আানা নেওয়া বন্ধ হয়েছে। সেই সাথে বন্ধ হয়েছে গরুর গাড়িতে পণ্য পরিবহন। এখন কাটিপাড়া থেকে বাঁশ টানি। প্রতিদিন ২/৩ টা বাঁশের চালান পৌঁছাতে হয় আড়তে। আর এই কাজের জন্য তাকে প্রতিদিন খালি পায়ে তপ্ত পিচের রাস্তায় প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে প্রতিদিন আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

বাঁশকাটা শ্রমিক আকরাম হোসেন জানান, আমি ও নির্মল ভোর থেকে বাঁশ কেটে কুঞ্চি ছেঁটে রাখি। পরিমল ১১/১২ টার দিকে এসে কেটে রাখা বাঁশ নিজে বহন করে গাড়িতে একাই সাজিয়ে বেঁধে নেয়। ২০/২৫ টা বাঁশ ভর্তি গাড়ি একাই ঠেলে নিয়ে বাঁকা বাজারে বাঁশের আড়তে পৌঁছে দেন। পরিমল আসলেই দুই গরুর সমান বোঝা বহন করে।

পরিমলের প্রতিবেশী সুনিল ঢালী বলেন, পরিমল দাদা খুব পরিশ্রমী মানুষ। এই বয়সে এত পরিশ্রম করে সেটা অবিশ্বাস্য। দুই গরুতে যে মালামাল বহন করত একই সমপরিমাণ মাল নিজে কাঁধে বহন করে গন্তব্যে পৌছে দেন। এই কাজ করেই তিনি সংসার চালাচ্ছেন।

পরিমলের স্ত্রী লক্ষী রানী জানান, আমার বিয়ের আগে থেকেই তিনি গরুর গাড়ি চালাতেন। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় গরু দুটি বিক্রি করতে হয়। সংসার চালানোর জন্য এখনো দুইটা গরুর সমান বোঝা টেনে চলেছেন। আমিও বাড়িতে গাভি গরু ও হাঁস-মুরগি পালন করে কিছু রোজগার করছি। দুজনের আয় দিয়ে কোন মতে সংসার চলে।

বাঁকা বাজারের বাঁশের আড়তদার অর্চনা রানী জানান, আমি ১৮/২০ বছর ধরে বাঁশ বিক্রি করি। পরিমল গাড়িয়াল আমার কিনে রাখা বাঁশ বহন করে আড়তে পৌঁছে দেন। তিনি অনেক পরিশ্রম করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন