চেক জালিয়াতি করে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রিপোর্ট জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। ১৪ নভেম্বর বিকেলে বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি। তারা মন্ত্রণালয়ে রিপোর্টটি পাঠাবেন।
গত ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষাবোর্ডে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে বোর্ড থেকে ৩৬টি চেকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি নিয়ে মামলা করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্বপদে থেকে তারা মামলা ও তদন্ত প্রভাবিত করেছেন বলে বোর্ডের অনেকে দাবি করেছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির প্রধান কেএম রব্বানি জানান, আমরা জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। রোববার ৫৮ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে শিক্ষাবোর্ডের সচিবের কাছে। ৩৬টি চেকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি টাকা। এই জালিয়াতির সাথে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিলেন। তাদের সহযোগিতায় টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। তবে এর বাইরে তিনি কথা বলতে চাননি। তবে কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বোর্ডের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় কর্মচারি আবদুস সালাম ও ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম এই টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন।
১৮ অক্টোবর দুদকের সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতারক প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলমের নামে মামলা করেন।
কিন্তু এতো বড় দুর্নীতির অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান, সচিবসহ জালিয়াত চক্রের হোতারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্যদিকে, বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপকর্ম উল্লেখ করে তাকে অপসারণে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট যশোর-২ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অ.) নাসির উদ্দিন ও যশোর-৬ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু অভিযোগ করেন, দুই সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন তিনি দুর্নীতির মামলার আসামি হয়েও স্বপদে রয়েছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য অভিযুক্তদের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে দুদক মামলা করলেও এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, বোর্ডের দুর্নীতির মামলার ফাইল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। আশা করছি চলতি মাসের যে কোনো দিন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই

