শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
৫৫ কাঠায় ৮ লাখ টাকা বিক্রির সম্ভাবনা

ফকিরহাটে প্রথমবারেই অর্গানিক বেগুন চাষে মুরাদের বাজিমাত

মোঃ সাগর মল্লিক, ফকিরহাট

বাগেরহাট ফকিরহাটের তরুণ কৃষক মুরাদ হালদার প্রথমবারেই অর্গানিক ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বেগুন চাষে যে সাফল্য পেয়েছেন, তা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক মৌসুমেই লাভবান হওয়া যায়।

নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের মৌভোগ গ্রামের কৃষক মুরাদ অন্যের ৫৫ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে চার জাতের উচ্চফলনশীল বেগুন চাষ শুরু করেন। জমিতে এক ফোঁটা কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে পুরোপুরি জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করায় তার ফসল হয়েছে সুস্বাদু, নিরাপদ ও বাজারে বেশি দামের। উৎপাদন খরচ পড়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে একটি ১৮ কাঠার প্লট থেকেই তিনি ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বেগুন। পূর্ণ উৎপাদন শুরু হলে তিনটি প্লট থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার বেগুন বিক্রির আশা রয়েছে তার।

গতকাল সোমবার সকালে মুরাদের ১৮ কাঠার খেতে গিয়ে দেখা যায়, ২৫-৩০ মণ বেগুন তুলতে ব্যস্ত ৯ জন শ্রমিক। তারা আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করে বস্তাবন্দি করছেন। ঢাকা ও মাদারীপুর থেকে আসা পাইকারদের মতে, বিষমুক্ত হওয়ায় এই বেগুনের চাহিদা যেমন বেশি, দামও তেমনি-যেখানে পাশের খেতে পাইকারি দাম ৫০ টাকা, সেখানে মুরাদের ক্ষেতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়।

খেতে প্রবেশ রোধে চারদিক ও ওপরে জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, কিউট্র্যাক ফাঁদ, স্টিকি ইয়োলো কার্ড ও ট্রাইকোডার্মা। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপারের ব্যবহারে সেচ খরচও অর্ধেকে নেমে এসেছে। চক্র বিএন ৪২২, নবকিরণ, ভিএনআর ২১২ এবং গ্রীণবল-এই চার জাতের বেগুন রোপণ করেছিলেন অক্টোবরের শুরুতে। আগাম ফলন ও দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন বিবেচনায় কৃষি অফিসের পরামর্শেই তিনি এসব জাত বেছে নিয়েছেন।

তার সাফল্যে আশপাশের কৃষকেরা উৎসাহিত হয়ে খেত পরিদর্শনে আসছেন, নিচ্ছেন পরামর্শও। অনেকেই আগামী মৌসুমে একই পদ্ধতিতে বেগুন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি গ্রামবাসীর মুখে এখন মুরাদের নতুন নাম-‘বেগুন মুরাদ’।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, “প্রথমবারের চাষেই মুরাদ যে সাফল্য পেয়েছে, তা সত্যিই অনুকরণীয়। সে নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আধুনিক ও অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করায় ফলন হয়েছে ব্যাপক।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “মুরাদের অর্জন দেখে এলাকায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। ফকিরহাটে উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

প্রথমবারেই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও বিষমুক্ত বেগুন চাষে মুরাদ হালদারের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন স্থানীয় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। তার উদ্যোগ দেখে তরুণ কৃষকদের মধ্যে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে ফকিরহাটকে অর্গানিক ফসলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত করতে পারে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন