আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট-৪, (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে জামায়াতে ইসলামী বেশ আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সাংগঠনিক শৃখলা ও নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে তাদের তৎপরতায়ও কোনো ঘাটতি নেই। অপরদিকে বিএনপি এখন পর্যন্ত এ আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতায় একাধিক প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। ফলে, এখন পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীরা গ্রুপিং নির্ভর বিভক্তি নিয়ে মাঠে যে যার মত কাজ করছেন। ইসলামী আন্দোলনও তাদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে, মাঠে কাজ করছে। এদিকে গতকাল উচ্চ আদালতে বাগেরহাটের ৪ টি আসন বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। একই সাথে ইসিকে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেন আদালত।
এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমকে মনোনীত করেছে। দলের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে মাঠ গোছানোর কাজে নেমে পড়েছেন। কোন প্রকার মতবিরোধ বা প্রার্থীতা নিয়ে টানাপোড়েন দলটির মধ্যে নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোঃ ওমর ফারুক নূরীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন দলের আমির মুফতি সৈয়ত রেজাউল করীম। এনসিপির কার্যক্রম মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় চালু হলেও এখনো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাউকে নির্ধারণ করতে পারেনি দলটি।
এখানে বিএনপি’র প্রার্থী চূড়ান্ত না হবার পিছনে দুটি কারণ সর্বমহলে আলোচনায় রয়েছে। তা হচ্ছে, আসন নিয়ে উচ্চ আদালতের মামলা ও জোটের শরীকদের ছেড়ে দেওয়া। মামলার রায়ে আসন যদি একটি কমে যায় তাহলে এখানে বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. এইচ সেলিমকেও বিএনপি নমিনেশন দিতে পারে বলে আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বেশ কয়েকজন মাঠে গণসংযোগ করছেন। তবে আলোচনায় আছেন দু’জন। এরা হচ্ছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ওবায়দুল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপন।
ড. ওবায়দুল ইসলাম বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আছেন বহু বছর ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিতে তার অবদান রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদের পক্ষে তার ভূমিকা ছিলো দৃশ্যমান। আওয়ামী শাসনামলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় দলীয় কার্যক্রমে তেমন সময় দিতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবের পরে এলাকায় তার বিচরণ ও পরিচিতি বেড়েছে।
অপরদিকে, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপন বিএনপি’র টানা ১৭ বছরের দুর্দিনে আওয়ামী দমনপীড়ন ভেদ করে এলাকায় দলীয় কার্যক্রম ধরে রেখেছেন। নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। আওয়ামী দমন পীড়নের মধ্যেও মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় বিএনপি’র বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন কাজী শিপন।
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি হওয়ার রেকর্ড এখানে নেই। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মুফতি আব্দুস সত্তার ১৯৯১ সালে দলীয় প্রার্থী ও ২০০১ সালে বিএনপি’র সাথে জোটভুক্ত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ কারণে আসনটি আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী তাদের বলে মনে করছে। অপরদিকে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি চাইছে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে আসনটি তাদের করে নিবে।
এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাড. আলতাফ হোসেন, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ড. মিয়া আব্বাস উদ্দিন, ১৯৯৬, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। এরপরে ২০১৪ সালের বিতর্কিত ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটেও আওয়ামী লীগের ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন এমপি হন। ২০২০ সালের কাগুজে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন ও ২০২৪ সালের আওয়ামী লীগের পাতানো ডামি নির্বাচনে বদিউজ্জামান সোহাগ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম

