মোংলা সমুদ্র বন্দর শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। পশুর নদীর তীরে অবস্থিত এই বন্দরটি গত কয়েক বছরে যুগান্তকারী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা ও গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের আধুনিকীকরণ এবং দক্ষতার উপর জোর দিয়েছে। এর ফলে বন্দরের কার্যক্রমে গতি এসেছে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকছে। গত অর্থ বছরে (২০২৪-২৫) মোংলা বন্দরে মোট ৮৩০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করেছে। বন্দরের ইনার বারে (অভ্যন্তরীণ অংশ) ড্রেজিং সম্পন্ন হওয়ায় এখন ১০ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ জেটি পর্যন্ত সরাসরি ভিড়তে পারছে। এর ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এর জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন- স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, ফর্কলিফট, রিচ স্ট্র্যাকার, মোবাইল ক্রেন এবং টার্মিনাল ট্রাক্টর সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে পণ্য খালাস ও পরিবহনের গতি বহুগুণে বেড়েছে। কার ইয়ার্ড, ওয়্যার হাউজ, কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং বিশেষায়িত জেটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, যা বন্দরের ধারণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলবে। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বিদেশি জাহাজ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াচ্ছে।
উন্নয়নের ফলস্বরূপ মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজ আগমন, পণ্য হ্যান্ডলিং এবং রাজস্ব আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরটি ধারাবাহিকভাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করছে, যা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখছে।
বিশেষ করে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির একটি বড় অংশ এখন মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস হচ্ছে। এছাড়াও, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সামগ্রিক পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে।
বন্দরকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় শিল্পকারখানা, ইপিজেড এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গড়ে উঠেছে, যা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারে মোংলা বন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে চলমান এবং ভবিষ্যতের জন্য গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা মোংলা বন্দরের জন্য এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
চীন সরকারের সাথে জিটুজি চুক্তির আওতায় আরও দুটি কন্টেইনার টার্মিনালসহ বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এর লক্ষ্য মোংলা বন্দরকে একটি আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় এবং গ্রিন পোর্টে রূপান্তরিত করা।
পদ্মা সেতু এবং রেল যোগাযোগ সংযোজন মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়েছে, যা রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বন্দরের দূরত্ব ও সময় কমিয়ে এনেছে।
চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সাথেও শক্তিশালী বাণিজ্যিক কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানান, “মোংলা বন্দর এখন আর কেবল একটি রপ্তানি নির্ভর বন্দর নয়, এটি একটি গতিশীল বাণিজ্যিক কেন্দ্র এছাড়াও সরকারের বড় বড় মেগা প্রজেক্টের মালামাল এ বন্দর দিয়ে সফলভাবে আমদানির সক্ষমতাই প্রমাণ করছে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মোংলা বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবে।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
