জি-নাইন কলা স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফকিরহাটে

চাকরি হারানো মনিরুজ্জামান আজ শত কৃষকের অনুপ্রেরণা

সাগর মল্লিক, ফকিরহাট

বাগেরহাটের ফকিরহাটে কৃষির নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন স্থানীয় কৃষক মনিরুজ্জামান। এক সময় চাকরি হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সাফল্যের শিখরে। হতাশার সেই অন্ধকার থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও নিয়মিত প্রশিক্ষণকে হাতিয়ার করে নতুন করে শুরু করেছিলেন জীবনের লড়াই। আর সেই লড়াইয়ের ফলেই জন্ম নিল জি-নাইন জাতের কলার বাগান, যা এখন এলাকায় পরিচিত গ্র্যান্ড নাইন কলা নামে।

মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি ৫০ শতক জমিতে ৩৭৫টি কলার চারা রোপণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। তবে প্রথম বছরেই আশানুরূপ ফলন মেলায় তিনি তিনগুণ লাভের আশা করছেন। তিনি বলেন, “এত বড় কাধি জীবনে দেখিনি। প্রতিদিনই লোকজন শুধু দেখতে আসে। জেলার চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে আমার কলা।”

মনিরুজ্জামানের সাফল্য দেখে আশেপাশের কৃষকরাও নতুন করে আশাবাদী হচ্ছেন। কৃষক শহীদুল আব্দুল্লাহ বলেন, “আগে আমি বেগুন, পটলসহ নানা সবজি চাষ করতাম। মনির ভাইয়ের বাগান দেখে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমিও এবার জি-নাইন কলা চাষ শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ, সফল হবো।”

স্থানীয় কৃষক শরীফ শেখ বলেন, “এক কাধিতে এত কলা আমি কখনো দেখিনি। আগামী বছর অবশ্যই জমিতে এই জাতের কলা চাষ করবো।”

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ৫ জন কৃষকের মাধ্যমে এই জাতের চাষ শুরু হয়েছিল। নিয়মিত তদারকি, সার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা সফল হন। বর্তমানে ফকিরহাটে প্রায় ৫০০ শতাংশ জমিতে জি-নাইন কলার চাষ হচ্ছে প্রতিটি কাধিতে ২০০ থেকে ২৮০টি কলা ধরে। বাজারমূল্য তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকে শখের বশেও বাড়ির আঙিনায় এই কলা লাগাচ্ছেন।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও জি-নাইন কলা চাষ লাভজনক। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কলা ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তবে ঢাকায় বা অন্য জেলায় গেলে দাম ১০ টাকা বা আরও বেশি। স্বল্প খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ অঞ্চলে এই বাণিজ্যিক চাষ আরও বিস্তৃত হলে কৃষকের জীবনে এবং এলাকার অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

এক সময় চাকরি হারিয়ে হতাশা কাটিয়ে ওঠা মনিরুজ্জামান শুধু নিজের ভাগ্যই বদলাননি, আশেপাশের কৃষকদেরও নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার গল্প এখন এলাকার শত শত কৃষকের অনুপ্রেরণা। ফকিরহাটের কৃষকরা বলছেন, মনিরুজ্জামান আজ তাদের পথপ্রদর্শক।

জি-নাইন কলার আলোয় এখন ফকিরহাট আলোকিত। এ আলো শুধু কলার বাগানেই নয়, কৃষকদের মনেও নতুন আশা জ্বালিয়েছে। হতাশার অন্ধকার ভেঙে আজ তারা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন