শনিবার । ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন আজ, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ও পেপার বহনের ছবি ভাইরাল

গেজেট ডেস্ক

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে গতকাল রাতে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার সরবরাহ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।  ব্যালট বাক্স পরিবহনের সময় ছাত্র দলের দুই নেতার অবস্থানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসময় তাদের ছবি তোলায় এক সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত দুই ছাত্রদল নেতা হলেন- জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন। ভুক্তভোগী সাংবাদিক ওসমান সরদার দৈনিক যায়যায়দিনের জাবি প্রতিনিধি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী জানান, রাতে তথ্য সংগ্রহে ওই সাংবাদিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যান। এ সময় তিনি দেখতে পান ব্যালট বাক্স নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা বের হচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছেন ছাত্রদলের ওই দুই নেতাসহ আরও কয়েকজন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ওই সাংবাদিক। এই ঘটনা নজরে এলে ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রোজেন ওই সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিওটি ডিলিট করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে এমন ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ করেন তিনি।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ওসমান সরদার বলেন, আমি ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার ভিডিও করছিলাম। পেছনে ছাত্রদলের বাবর ভাই ও রোজেন ছিলেন। পরে রোজেন আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ বি এম আজিজুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়, ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থী, অতিথিসহ যে কোনো ধরনের বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন না।

এদিকে এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলিয়ে মোট ৮টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, বাগছাসের ‘সম্মিলিত ঐক্য ফোরাম’, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের পৃথক প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ ও ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, এছাড়া আরও তিনটি স্বতন্ত্র প্যানেল।

শিক্ষার্থীদের মতে, এবারের নির্বাচনে এককভাবে কোনো প্যানেল এগিয়ে নেই। ভোটাররা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ, আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং দলীয় কার্যক্রমের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন।

সহসভাপতি (ভিপি) পদে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত আরিফুজ্জামান উজ্জল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু, ছাত্রদলের শেখ সাদী হাসান ও শিবির সমর্থিত প্রার্থী আরিফ উল্লাহ।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আলোচনায় আছেন শিবির সমর্থিত মাজহারুল ইসলাম, ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী এবং বাগছাস সমর্থিত তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী। রাজনৈতিক পেরিফরির বাইরে থাকা এ ভোটারদের অংশগ্রহণ শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ও দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। ভোট গ্রহণ শেষে বিশেষ ওএমআর মেশিনে গণনা করা হবে ভোট।

এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে এটি হবে ১০ম জাকসু নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলনের দৃষ্টান্ত।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন