ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করেছেন। তিনি “নতুন বাংলাদেশ প্রশ্নে মীমাংসার সিলসিলা” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শরীফ ওসমান হাদি বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্যক্তিরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো জ্ঞান অর্জন এবং লড়াই করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা যদি আজ শহীদ হই, তাহলে আমাদের সন্তানরা মুক্তি পাবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের বইগুলোতে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কোনো উল্লেখ নেই। এই ইতিহাস আমাদের নিজেদেরকেই জানতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের ‘হাসিনার তৈরি ন্যারেটিভে’ সীমাবদ্ধ না থেকে পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের ইতিহাস পড়ার আহ্বান জানান।
হাদি বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সরকার যেন পিছনের কোনো শক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি গত বছরের জুলাই গণহত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে, আর বিচার প্রত্যাশীরা ন্যায়বিচারের জন্য হাহাকার করছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, গণমাধ্যমগুলো একপেশে আচরণ করছে। তারা টক-শোতে কেবল সেসব মানুষদের ডাকে যারা একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ তৈরি করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে ৫০ জনেরও বেশি বিনা ভোটের মুক্তিযোদ্ধা এমপি ছিলেন, কিন্তু তখন তাদের চেতনা কোথায় ছিল, সে বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না।
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি জনগণের তৈরি সংবিধান নয়, বরং কিছু নির্দিষ্ট লোকের হাতে তৈরি একটি দলিল, যা পশ্চিমা আদর্শের অনুকরণে তৈরি। তিনি দাবি করেন, ‘৭২-এর এই সংবিধানকে গত ১৭ বছরে হাসিনা ফ্যাসিস্ট সংবিধানে রূপান্তর করেছেন।
শরীফ ওসমান হাদি চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত, কিন্তু সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে মনোযোগ দিচ্ছে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের ‘মরণ কামড়’ দেবে। এই লড়াইয়ে জয় পেলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে, আর হেরে গেলে পরিণতি সিপাহি বিপ্লবীদের মতো হবে।
এই অনুষ্ঠানে অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হারুনু-অর-রশীদ এবং কোস্টাল এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হকও বক্তব্য রাখেন।
খুলনা গেজেট/এএজে