খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

কয়রায় স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ বাঁধছেন দুই সহস্রাধিক মানুষ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কয়রা প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর জোয়ারের পানিতে দূর্বল বাঁধ ভেঙে ও উপচে খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত দু’দিন প্রবল স্রোতে পানিতে তলিয়ে যায় এসব গ্রাম। অবশেষে আজ শুক্রবার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়ি গ্রামের মঠের মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্থানীয় দুই সহস্রাধিক মানুষ। হাতে হাত মিলিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন বাঁধ টিকয়ে রাখতে। জোয়ার আসার আগেই বাঁধ মেরামতে করার চেষ্টা করছে তারা৷

শুক্রবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রায় ৬০ ফুট ভাঙা বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে অস্থায়ীভাবে মেরামতের কাজ শুরু করেন স্থানীয় গ্রামবাসী। শুধু মঠবাড়ি গ্রামের মানুষই নয়, এ কাজে অংশ নিয়েছেন কয়রা, শ্রীরামপুর, অর্জুনপুর, পল্লীমঙ্গল সহ কয়রা উপজেলার ১০ থেকে ১৫ গ্রামের মানুষ। তারা বাঁশ, মাটি, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে অস্থায়ী এই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ মেরামতের কাজে অংশ নিতে গ্রামবাসীকে আহ্বান করে মাইকিং করা হয়।

ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে গ্রামগুলোতে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গ্রামবাসী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অনেক বাঁধের কোনো কিনারা হয়নি।

কয়রার বাসিন্দা নিতিশ সানা বলেন, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম। ফের বৃহস্পতিবারের জোয়ারে ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ দিয়ে আরও বেশি পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। মানুষ অনেক কষ্টা রয়েছে। অনেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এ জন্য শুক্রবার সকালে ২ হাজারের বেশি মানুষ স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ মেরামতে নামে।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মন্ডল বলেন, কয়রার মানুষের এখন একটাই চাওয়া টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতি বছর মানুষ পানিতে ডুবছে। এ জন্য তারা নিজেরাই বেড়িবাঁধ মেরামতে নেমেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাঁধ মেরামতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।

খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জি এম মাহবুবুল আলম বলেন, শুক্রবার ভোরে নদীতে ভাটি লাগার সাথে সাথে কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে নদীতে জোয়ার আসার আগেই আমরা মঠবাড়ি গ্রামের মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশে ক্লোজারটি আটকাতে পেরেছি। প্রতিদিন এলাকা বাসি মিলে বাকি রাস্তায় কাজ করবো।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে মঠবাড়ি গ্রামের মঠের মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশের বেড়িবাঁধ সংস্কার শুরু করা হয়। এখানে প্রায় তিন হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। পরবর্তী জোয়ার আসার আগেই কাজ শেষ করতে হবে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ, কয়রা ও শাকবেড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি ৬/৭ ফিট বৃদ্ধি পেয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে ১১ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও পানি উন্নয়ন বো‌র্ডের জরাজীর্ণ বাঁধ উপ‌চে লোকালয় প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন গ্রামসহ মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে।

লোনা পানি প্রবেশ করায় ফসলি জমি, মৎস্য, গবাদি পশুসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তারমধ্যে মৎস্য ঘের ডু‌বে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে। ২০৫০‌টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ডু‌বে প্রায় ১৫ কো‌টি টাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হ‌য়ে‌ছে। বাড়ি ঘরে জোয়ারের পানি ঢোকায় ৫ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।

বুধবার (২৬ মে) ১১টি পয়েন্ট ভেঙে ও উপচে নদীর জোয়ারের পানিতে ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগীতায় ৮টি পয়েন্ট আটকাতে পারলেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া, পবনা এবং উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী নামক স্থান আটকাতে ব্যর্থ হয়। ফলে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরের জোয়ারে আরও ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।

কয়রা উপজেলার দশহালিয়ার তিন কিলোমিটার, মঠবাড়ি, তেতুলতলার চর, আংটিহারা, মঠবাড়ী, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহসিল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশির হাটখোলা, কাটমারচর, ২ নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পবনা, কাশির খালের গোড়া, হোগলা, উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী, শাকবাড়িয়া, সুতির অফিস, নয়ানি, খোড়ল কাটি, জোড়শিংসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হওয়ার পরে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম।
এখানকার বাঁধ সংস্কারের জন্য চেষ্টা করেও যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কাজের অনুমতি না মেলায় আজ এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

মহারাজপুরস্থ প‌শ্চিম দেয়াড়া একতা সং‌ঘের সাধারণ সম্পাদক আল আ‌মিন জানান, আম্পানের আঘাতে ক্ষতি মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর আবার প্লাবিত হয়েছে। তিনি কয়রাবাসীকে রক্ষা করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

খুলনার কয়রা উপজেলার পিআইও সাগর হোসেন সৈকত বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বুধবা‌রে ৩৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। প‌রের দিন আরও কিছু গ্রাম প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে। ২৫ হাজার মানুষ পা‌নিবন্দী র‌য়ে‌ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কো‌টি টাকা ক্ষয়ক্ষ‌তির তালিকা তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছে। ক্ষ‌তির প‌রিমাণ আরও বাড়‌তে পারে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!