খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

‘ইয়াস’র প্রভাবে উত্তাল সাতক্ষীরা উপকূলের নদ-নদী, অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকন্ঠা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা উপকূলের নদ-নদী। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝড়ো বাতাসের সাথে উপকূলের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর আচড়ে পড়ছে ঢেউ। এতে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।

শ্যামনগরের গাবুরার নাপিতখালী, মুন্সীগঞ্জের সিংহড়তলী ও রমজানগরের বড় ভেটখালীতে বেড়িবাঁধ উপচে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বালির বস্তা দিয়ে তা বন্ধের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের মূল প্রভাব ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও ওড়িস্যায় পড়বে বলা হলেও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইয়াস এর প্রভাবে সকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো বাতাস বইছে। সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে এসব নদ-নদী। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকায় থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার আগাম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা বহনযোগ্য সম্পদ নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ, হরিনগর সহ পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর ও কাশিমাড়ি এবং আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, আশাশুনি সদর ও খাজর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে জনগনকে সতর্ক করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৪৫ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১০৩ টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারন ক্ষমতা ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জার গিফারি। এ ছাড়াও জেলায় দেড় হাজার স্কুল কলেজ মাদ্রাসাও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোভিড পিরিয়ডে নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।

এদিকে, উপকূলীয় এলাকায় ৪৩টি পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন, গাবুরার নাপিতখালি, পাশ্বেমারী ও ৩ নং সোরাসহ কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ উপচে পানি চিংড়ি ঘের ও বসতি এলাকায় ঢুকতে থাকলে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালির বস্তা দিয়ে তা বন্ধের জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পূর্নিমার ভরাকাটাল ও পূর্নচন্দ্র গ্রহণের সময় ইয়াস আঘাত হানলে জলোচ্ছাসের আশংকা করছেন উপকূলবাসী। এর ফলে বেড়িবাঁধগুলি ভেঙ্গে পানিতে সয়লাব হতে পারে উপকূলের জনপদ।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের মূল প্রভাব কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীতে দুপুরে অস্বাভাবিক জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে। নাপিতখাল ও সোরা এলাকায় নদীর পানি বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢোকা শুরু করলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে জিও বস্তা দিয়ে পানি আটকানো হয়। দুপুরের জোয়ারে পানি আটকানো সম্ভব হলেও রাতে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা সতর্ক রয়েছে। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের কারনে তার ইউনিয়নের মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি জানান।

অপরদিকে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের ৮ টি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহকারি বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হলে তাদেরকে উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে একটি অস্থায়ী কন্টিনজেন্ট স্থাপন করেছে কোস্টগার্ড। ইতোমধ্যে তাদের একাধিক টিম নীলডুমুর, গাবুরা, মুন্সীগঞ্জসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী সকল পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দিতে ও ঝড়ের কবলে পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া লাইন সংস্কার করে দ্রুত লাইন চালু করার নিমিত্তে একটি আলোর গেরিলা টিম গঠন করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্যামনগর জোনাল অফিসে মঙ্গলবার এক প্রস্তুতিমূলক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক (দোলন) বলেন, ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” এর জন্য উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভার মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। উপকূলীয় এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার গুলো প্রস্তত নিশ্চিত করা হয়েছে। যেসব স্থানে বেড়িবাঁধ গুলোর অবস্থা খারাপ সেসব জায়গায় পাউবো সংস্কারের কাজ চলমান রেখেছে জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!