করোনাভাইরাস মহামারিতে ভারতের অবস্থা বেসামাল। দৈনিক বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে ভিড় বাড়ছে দেশটির শ্মশানগুলোতে। এই অবস্থায় বিভিন্ন শ্মশান থেকে সেসব মৃতদেহের পোশাক চুরি করতো একদল লোক। শুধু তাই নয়, চুরি করা সেসব পোশাকে নামী-দামী বিভিন্ন কোম্পানির স্টিকার লাগিয়ে দোকানে দোকানে সরবরাহও করতো তারা।
অবশেষে রোববার বিশেষ এই চোর গ্রুপের ৭ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বাঘপাত শহরে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বিভিন্ন শ্মশানে করোনায় মৃতদের সৎকারের সময় তাদের পোশাক, এমনকি গায়ের সাদা চাদরও চুরি করতো তারা। তারপর সেগুলোতে এক বিশেষ ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে পৌঁছে দেওয়া হতো দোকানে দোকানে। বিনিময়ে টাকা দিতেন দোকানদারেরা।
যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে গত ১০ বছর ধরে অভিযুক্তরা এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসলেও সম্প্রতি করোনা মহামারির ভয়াবহ অবনতিতে তাদের এই ‘ব্যবসা’ ফুলেফেপে ওঠে। এরপরই পুলিশের ফাঁদে পড়ে শ্রীঘরে অবস্থান হয় ৭ জনের।
পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত চোরদের কাছ থেকে ৫২০টি চাদর, ১২৭টি কুর্তা এবং ৫২টি শাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও নানারকমের জামা কাপড়ও ছিল তাদের কাছে। এসব কাপড়ই গত কয়েক দিনে মৃতদের শরীর থেকে খুলে নেওয়া হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিতে যেখানে শ্মশানে শ্মশানে মৃতদেহের স্তূপ জমছে, সেখানে এই ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যজুড়ে।
আটককৃত চোরদের মধ্যে ৩ জন একই পরিবারের সদস্য। গত ১০ বছর ধরে তারা এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। চুরি করা এসব কাপড় বিক্রির জন্য স্থানীয় বেশ কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে রীতিমতো চুক্তিও রয়েছে তাদের। এছাড়া চুরি করা কাপড় দোকানে দিয়ে প্রতিদিন তারা মাথাপিছু ৩০০ টাকা করে পেতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অন্য সময় হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেবল চুরির মামলাই দায়ের করা হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে ওই ৭ জনের বিরুদ্ধে মহামারি আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে ভারতে দৈনিক আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা লাগামছাড়া। সোমবার (১০ মে) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জন। একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৭৫৪ জন।
খুলনা গেজেট/এনএম