খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ
তবু থামছেনা ব্যবসা

অভয়নগরে শিলপাটার অভিশাপে প্রাণ গেছে ১৮ জ‌নের, অসুস্থ ৬

শাহীন আহমেদ, অভয়নগর

নওয়াপাড়া পৌরসভার জাফরপুর মাইলপোষ্ট গ্রামে শিলপাটার অভিশাপে একে একে কেড়ে নিয়েছে ১৮ টি প্রাণ, অসুস্থ রয়েছে ৬ জন, মৃত্যুর সাথে লড়ছে আরো ২ জন। তবুও থামছেনা শিলপাটার ব্যবসা। ৬ জন থেকে নতুনভাবে যোগ হ‌য়ে‌ছে আরও ২ জন ব্যবসায়ী।

এক সময়কার সম্ভাবনাময় শিলপাটার ব্যবসা উপজেলার ৬ শতাধিক পরিবারের মুখে যে হাঁসি ফুটিয়েছিল সেই ব্যবসা আজ তাদের হাঁসি আনন্দ কেড়ে নিয়ে করেছে সর্বশান্ত। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে জাফরপুর-একতারপুর (মাইলপোষ্ট) গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মৃত আসমত আলী খাঁর ছেলে আলী আকবার খাঁ শিলপাটার ব্যবসার যাত্রা শুরু করে উপজেলার প্রায় ৬ শতাধিক পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছিলো। সেই ব্যবসা আজ একে একে কেড়ে নিয়েছে অনেক গুলি প্রাণ। মৃত আসমত আলী খাঁর তিন পুত্র আলী আকবর খাঁ (৫১), গিয়াস উদ্দিন খাঁ (৫০), ইসলাম (৩০), মৃত আলী আকবার খাঁর দুই পুত্র রানা (২৬), দ্বিতীয় পুত্র ইসমাইল (২৫), রব আলী শেখ এর দুই পুত্র মোজাম (২৮), এমদাদুল (২৫) এবং তাদের নিকটতম আত্নীয় এই ব্যবসার সাথে জড়িত মোবারক ব্যাপারী (৫৪) ও তার ছেলে রাসেল ব্যাপারী (২৫), মৃত গোলাম সবুরের পুত্র কালাম (৪০), শামসুল হক হাওলাদারের পুত্র সালাম (৫২), আক্কেল আলীর পুত্র জাকির হোসেন (৩২), মৃত মকবুল হোসেনের পুত্র শাহাজাহান (৫০), হবি তালুকদারের পুত্র পিন্টু তালুকদার(২৫), আজগার আলীর একমাত্র কণ্যা মরিয়ম খাতুন (২৫), আদম আলীর পুত্র শাহাদৎ (২৭), মৃত মমিন মিয়ার পুত্র আমিনুর (২৫), আরফিন শেখের পুত্র সাদ্দাম হোসেন (২২), মৃত আহম্মদ আলীর পুত্র মনা (২৫) সর্বশেষ মারা গেলেন মৃত সোরাব আলীর পুত্র রেজাউল (২৫)।

এরা সবাই শিলপাটার ডাস্ট (ধূলা) জনিত কারণে সিলিকোসিস (ডিপিএলডি) রোগে ধুকে ধুকে পরিবারগুলিকে নিঃস্ব করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। এখনো এই এলাকায় আরো দুই জন মৃত কালাম সরদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫০) ও ইলিয়াস হোসেনের ছেলে সবুজ হোসেন (২৫) কে ডাক্তার ফেরত দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, শিলপাটার ডাস্ট ফুসফুসে জমাট বেঁধে ও টিবি রোগ বলে ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় শেষ পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু।

মহাখালি জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ মাসুম আক্তার বলেন, এটি সিলিকোসিস (ডিপিএলডি) রোগ। ফুসফুসে পাথরের গুড়া যেয়ে ফুসফুসের ছিদ্রগুলির মুখ আটকে যায় ফলে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে না পারায় ফুসফুস শুকিয়ে যায়। ধীরে ধীরে ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোন চিকিৎসা নেই। আমরা রানার চিকিৎসার জন্য কয়েক বার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে বোর্ড বসিয়ে কোন উপায় বের করতে না পেরে ফেরত দিয়েছি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংসদ ক্লাব এলাকার সকল ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করার কথা দিলেও কথা রাখেনি । নতুন উদ্যোমে পাথর কাটা আধুনিক মেশিন বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান জরিপে ৬ জন ব্যবসায়ীর সাথে গত মাসেই নতুন করে যোগ হয়েছে আরো ২জন ব্যবসায়ী। এ ভয়াবহ অবস্থা বিবেচনা করে তাদের আবারো এ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে তারা অনেকটা পাশ কাটিয়ে যায় এবং ব্যবসা বাঁচাতে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় গ্রহণ করে।

এদিকে শিলপাটার মিস্ত্রীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভালো কোন কর্মসংস্থান পেলে এ কাজ ছেড়ে দেবো। আমরাতো অনেকটা কর্মসংস্থানের অভাবে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কাজ করি। একটা সময় না দিতে পারি দাদনের টাকা না চালাতে পারি সংসার।

এলাকার সুধী সমাজ জানান, অতি শীঘ্রই এই মরণ ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে পুণর্বাসন করে শিলপাটার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হোক। তা না হলে এ পর্যন্ত একই এলাকা নারী পুরুষ সহ মারা গেছে ১৮ জন। যদি কোন সংস্থা এই শিলপাটা ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে পুণর্বাসনের উদ্যোগ নিতো তাহলে হয়তো শিলপাটা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা আর বাড়তো না। এই ব্যবসা চলতে থাকলে এক সময় এলাকা মানুষ শুণ্য হয়ে পড়বে। কারণ এ ব্যবসার সাথে নারী পুরুষসহ প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার জড়িত। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এই ব্যবসা বন্ধ না করলে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে।

 

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!