পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (৩১ মার্চ) রাত ১২টার দিকে পাউবো বিভাগ-১ এর অধীনে ৫ নং পোল্ডারের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন প্রায় দুইশ ফুট বাঁধ নদী গর্ভে চলে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এদিকে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢোকা অব্যহত থাকায় সহাস্রাধিক বিঘা জমির চিংড়ি ঘেরসহ মিষ্টি পানির পুকুর লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। খোলপেটুয়া নদীর পানিতে পশ্চিম ও পুর্ব দূর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, আড়পাঙ্গাশিয়া ও মাদিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে এসব গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার পাশাপাশি তিন শতাধিক বাড়ি-ঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারসহ পাউবো’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, টানা কয়েক বছর ধরে দূর্গাবাটিসহ আশপাশের এলাকার বেড়ি বাঁধ ভাঙ্গতে থাকার পরও গত কয়েক মাস যাবৎ পার্শ্ববর্তী নদী থেকে ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলনের কারনে সেখানকার বাঁধে ভাঙ্গন অব্যহত থাকে। দু’এক দিনের মধ্যে ভাঙ্গন কবলিত অংশের বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে সামনের বড় জোয়ারে পাশের গ্রামগুলোও তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে তারা জানান।
দূর্গবাটি গ্রামের নীলোৎপল মন্ডল জানান, বুধবার রাতের জোয়ারে সাইক্লোন শেল্টারের পাশের বাঁধ নদীতে ধসে যাওয়ায় তার চিংড়ি ঘের ও মিষ্টি পানির পুকুর ভেসে গেছে।
একই গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল ও পোড়াকাটলা গ্রামের নীলকান্ত রপ্তান জানান, রাতের জোয়ারের পানিতে শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারে ছোট বড় হাজারের বেশী চিংড়ি ঘের আর মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে গেছে। এছাড়া অনেকের বাড়ি এমনকি বসত ঘরে পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারের পানি প্রবল বেগে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় সমগ্র এলাকা নদীর সাথে একাকার হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙ্গন কবলিত অংশের পাশে নুতন করে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের বাইরের অংশের চর দেবে যাওয়ার দরুন সেখানে বাঁধ দাড়াচ্ছে না দাবি করে তারা দ্রুত বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি পাশের নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য ও মাদিয়া গ্রামে বসবাসকারী ডালিম কুমার ঘরামী জানান, বুলবুল ও আম্পান এর ক্ষয়ক্ষতি এখনও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে রাতের ভাঙ্গনে আমাদের ঘের-ভেড়ী তলিয়ে দিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন কবলিত বাঁধ মেরামতের আর্জি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নদীর লবন পানিতে গোটা এলাকা তলিয়ে যাওয়াতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোটা এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার খাবার পানির সংকটে পড়েছে।
সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আাবুল খায়ের জানান, স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত অংশের ভিতর দিয়ে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। সংলগ্ন অংশের নদীর তলদেশে স্কাউরিং এর মাত্রা বেশী বিধায় সেখানকার বাঁধ বার বার ভাঙ্গছে। এরপরও বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে ঠোকা বন্ধ করার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার বাঁধের প্রায় ষাট ফুট জায়গা পাশের খোলপেটুয়া নদীতে ধ্বসে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে পাউবো কতৃপক্ষ টানা দু’দিন ভাঙ্গন কবলিত অংশে বালু/মাটি দিয়ে ভাঙ্গনের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বুধবার রাতের জোয়ারে একই অংশ হতে প্রায় দুইশ ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হলে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে পশ্চিম ও পুর্ব দূর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, আড়পাঙ্গাশিয়া ও মাদিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়।
খুলনা গেজেট/কেএম