ফুলেল শ্রদ্ধা, আলোক প্রজ্বালন, প্রতিবাদী গান ও আলাচনা সভার মাধ্যমে ‘যশোর হত্যাকান্ড’ দিবস পালন করেছে উদীচী যশোর জেলা সংসদ। উদীচী ট্র্যাজেডির ২২ বছরে শনিবার বিকেল থেকে রাত অবধি টাউনহল মাঠের রওশন আলী মঞ্চে চলে এসব অনুষ্ঠান। এ আয়োজনে শহরের অন্যান্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।
‘ঝরেছে রক্ত ঝরুক রক্ত আমরা হারবো না, সাথীদের খুনে রাঙা রাজপথ আমরা ছাড়বো না’ এ দীপ্ত শপথে উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগত বক্তৃতা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব। স্মরণানুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌল্লা, সিপিবি জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর আহসান হাবিব, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল ও উদীচীর দ্বাদশ সম্মেলনে বোমা হামলায় আহত সুকান্ত দাস।
বক্তারা বলেন, এতদিনেও যখন সুষ্ঠু বিচার সম্ভব হয়নি তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকতে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে, যথাযথ বিচারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে। বিচার নামের নাটকীয়তা ছাড়া আর কিছু হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, দু’দশকেরও বেশি সময় পরে এসে একটাই প্রশ্ন জনসাধারণের আস্থার জায়গা কোথায়? বিচার করতে না পারা অনেকাংশে রাষ্ট্রের দুর্বলতা। আর এখন মানুষের বাক স্বাধীনতাকেও খর্ব করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র। ধর্মান্ধ মৌলবাদ শক্তি স্বাধীনতার চেতনা শব্দকে পুঁজি করে অসাম্প্রদায়িক দেশপ্রেমিকদের রঙে রঙ মিলিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করছে। সময় থাকতে এদের প্রতিহত করতে না পারলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
আলোচনা শেষে উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘটনাস্থলে নির্মিত স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ করে উদীচী জেলা সংসদ, যশোর ইনস্টিটিউট, জেলা আওয়ামী লীগ, সুরবিতান, চাঁদের হাট, বিবর্তন, তির্যক, স্পন্দন, শেকড়, সুরধুনী, মহিলা পরিষদ, জাসদ, সিপিবি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফাউন্ডেশনসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ শেষে আলোক প্রজ্বালন ও প্রতিবাদী গানের মাধ্যমে শোক আর দ্রোহের আগুনে পুড়ে আগামীর কঠিন লড়াইয়ে আরও খাঁটি যোদ্ধা করে তোলার মন্ত্রে দীক্ষিত হন সকলে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাত ১২টা ১০ মিনিটে যশোর টাউনহল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটে নারকীয় ঘটনা। পরপর দু’টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ। গত ২২ বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়নি ও খুনীরা রয়েছে অধরা।
খুলনা গেজেট/কেএম