আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। জমে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। দিন-রাত চলছে প্রচারণা। দুপুরের পর থেকে মাইকিংয়ে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা পৌর এলাকা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর শহরের অলি-গলি। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন যতই এগিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মাঝে ব্যস্ততাও তত বাড়ছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেন শেখ নাসেরুল হক, বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী বর্তমান মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী, নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতক্ষীরা চেম্বার সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা নুরুল হুদা ও হাত পাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মনোনীত প্রার্থী ডা. এস এম মুসতাফীজ উর-রউফ।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে ৮৯ হাজার ২২৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।
এদিকে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে প্রার্থীদের মাঝে প্রচার প্রচারণার ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা। অনেক প্রার্থী ফজরের নামাজ আদায় করার পরপরই কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দল বেধে হ্যান্ড মাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ভোট প্রার্থনায়। পাড়ায় মহল্লায় ঢুকে হ্যান্ড মাইকে প্রার্থীর নাম বলে, ‘ওমুক আসছেন আপনাদের কাছে দোয়া চাইতে, মা-বোনেরা আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।’
এসময় প্রার্থীরা অনেক পুরুষ ভোটারদের জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছেন। অনেকে আবার সেলফি তুলছেন নবীন ও প্রবীণ ভোটারদের সাথে। বয়ষ্কদের হাত ধরে মাথায় তুলে বলছেন আমার জন্য দোয়া করবেন। এসময় ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট ও পোষ্টার। অনেক প্রার্থী ভোর রাতে ভোটারদের বাড়ির গেটে ও ঘরের বারান্দাসহ দৃশ্যমান স্থানে লিফলেট ফেলে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে তাদের নারী কর্মী সমর্থকরা দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের প্রার্থীর জন্য ভোটারদের কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। একই সাথে দুপুরের পর থেকে মাইকিংয়ে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা পৌর এলাকা। এভাবে মাইকে প্রচার চলছে রাত ৮টা পর্যন্ত।
অপরদিকে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে প্রার্থীরা পাড়ায়-মহল্লায় সকাল বিকাল মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠক করে নিজের অবস্থান ও আগামী পরিকল্পনা তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এলাকার উন্নয়নের। বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তাদেরকে আবারও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অনুরোধ রাখছেন। নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘পাঁচ বছর এলাকার উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করেছি, মহান আল্লাহর রহমতে আমি আপনাদের পাশে থেকে এবং আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আগামীতে অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করবো, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার প্রতীকে মূল্যবান ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’ আবার কেউ বলছেন, ‘আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। আমি সার্বিক উন্নয়ন করে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে আলোকিত পৌরসভা গড়ার স্বপ্ন দেখি, আপনারা আমাকে একবার সুযোগ করে দিন।’
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৭৯ হাজার ৬৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী শেখ আজহার হোসেন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৮৭৩ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু ১২ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে ৩য় অবস্থানে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) নিয়ে মোঃ সাহাদাৎ হোসেন ৯ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন।
এদিকে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করলেও ভোটার আছেন অন্য ভাবনায়। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট টা তারা দিতে পারবেন তো? গত ৩০ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া জেলার পার্শ্ববর্তী কলারোয়া পৌর নির্বাচনের অংশ গ্রহণকারি প্রতিদ্বন্দ্বি অন্য দুই প্রার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের কারণে এমন সংশয় জেগেছে অনেক সাধারণ ভোটারদের মনে। তবে সব সংশয় কাটিয়ে এবারের পৌর নির্বাচনে ভোটররা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে তার মূল্যবান ভোটটি দিতে পারবেন এমন প্রত্যাশা সাতক্ষীরা পৌরবাসির।
খুলনা গেজেট/এনএম