সাতক্ষীরায় ভূয়া নিবন্ধনে তিন তিনবার যোগদান দেখিয়ে আশাশুনির বড়দল আফতাব উদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের শিবপদ সানার বিরুদ্ধে ১০ বছর ধরে প্রভাষক পদে চাকুরি করে বেতন ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার প্রার্থনা করে কুমিরা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আদিত্য ব্যানার্জী বাদী হয়ে দুদকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শিবপদ সানা ২০০১ সালে বিকম ব্যবস্থাপনা (সম্মান) এবং ২০০৪ সালে এমকম (ব্যবস্থাপনা) পাশ করেন। অথচ এমকম পাশের দুই বছর আগে মাষ্টার্সের জাল সনদ দেখিয়ে ২০০২ সালে তিনি প্রভাষক পদে নিয়োগ নেন।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকার সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) মোঃ জসিম উদ্দিন ২০১০ সালের ১ জুন ৭জি/২২৫ (ক-৩)/১০/৮১৪৩/২ নং স্মারকে এমপিও ভুক্তি প্রসঙ্গে প্রভাষক শিবপদ সানার নিয়োগকালে মাস্টার্স সনদ না থাকায় নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে উল্লেখ করেন। নিয়োগ বৈধকরণে প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি বলে এমপিওভুক্তি সম্ভব নয় বলে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
এসময় কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাবাজার ও প্রভাতফেরী নামে দু’টি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পরে প্রভাষক শিবপদ সানা নতুন করে নিয়োগ পেতে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর ফের আবেদন করেন। নিয়োগ পেতে ২০০৫ সালে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক বলে প্রজ্ঞাপন জারি করায় এবার তিনি ভূয়া নিবন্ধন দেখিয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়োগ গ্রহণ করেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত শিবপদ সানা মৃত করুনাময় সানার ও মৃত উর্মিলা রানী সানার ছেলে। অথচ তিনি জালিয়াতি করে জনৈক জিয়াউর রহমানের ছেলে মোঃ রেজাউল করিমের রেজি: নং-৮০০১৯৮৩০/২০০৮, রোল নং-২০১১০৪৫১, পাশের সন-২০০৮, ব্যবস্থাপনা বিভাগ বিষয়ের নিবন্ধন নিজের নামে নিবন্ধন সনদ দেখিয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তাকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রভাষক পদে আবারও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ প্রদান করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ তার এসব অনিয়মের প্রতিকার না করায় তিনি ভিন্ন সময় ভিন্ন কায়দায় যোগদান করেছেন। তার ১ম যোগদান ২০০২ সালের ২৩ জুলাই। অথচ ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক শ্রেণির ভোটার তালিকায় শিবপদ সানার যোগদানের তারিখ দেখান হয়েছে ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি। এরই এক পর্যায়ে শিবপদ সানা পৃথক আরেকটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করেন। যার রোল, রেজি: নম্বর, সন ও পরীক্ষায় দেখান হয় ৬৫৭০৩৫২ ও ০৫১০৭৯৫৩ এবং ১ম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০০৫।
সবশেষ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পত্রের প্রেক্ষিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’র সহকারী পরিচালক (পমুপ্র-৩) তাজুল ইসলাম গত ২ ডিসেম্বর লিখিতভাবে জানিয়েছেন শিবপদ সানা কর্তৃক দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয়, সম্পূর্ণ জাল ও ভুয়া এবং রোল নম্বরটি অন্য ব্যক্তির। প্রকৃত রোল নম্বরধারীর নাম তানমীর ইয়াসমিন, তার পিতার নাম মো. শাহজাহান আলী। সনদধারী শিবপদ সানা জাল/জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে এত কিছুর পরও শিবপদ সানা গত ১০ বছরেরও অধিককাল ভুয়া সনদ ও অবৈধ নিয়োগ নিয়ে সরকারি বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে আসছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পরিষদ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাদীসহ সচেতন মহল হতবাক হয়ে পড়েছেন। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিমাই চন্দ্র সানা, কার্ত্তি লাল বিশ্বাস, মিলন কুমার শীল, দীপঙ্কর কুমার সরকার, সন্দীপ কুমার মন্ডল, শিবপদ সরকার, মধুসুদন বাইন, প্রবীর কুমার বৈরাগীসহ আরও কয়েকজনের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি। ফলে তাদের নিয়োগে বিভিন্ন আপত্তি থাকায় এমপিওভুক্তি সম্ভব হচ্ছে না মর্মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১০ সালের ১ মার্চ আপত্তি উত্থাপন করেন। কিন্তু এখনো তাদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
দুদকে অভিযোগকারী সহকারী অধ্যাপক আদিত্য কুমার ব্যানার্জী জানান, শিবপদ সানা যে চতুর ও ধুরন্ধর ব্যক্তি তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ তিনি বিভিন্ন দপ্তরকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে চাকুরিতে আছেন এবং সরকারি বেতন ভাতাদি উত্তোলন করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি শিবপদ সানা’র বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রভাষক শিবপদ সানার কাছে জানাতে চাইলে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বলেন, তিনি বৈধভাবেই নিয়োগ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শিহাব উদ্দিন জানান, এই মূহুর্তে তার সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারব না। তবে তারসহ এখানে কর্মরত আরো অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। যা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম