যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় সত্তরোর্ধ ভূমিহীন খগেন মন্ডলের পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁই না থাকার কষ্টে তিনি চলন্ত ট্রেনের নিচে আত্মহত্যার চেষ্টাকালে দায়িত্বরত রেলক্রসিংয়ের গেইটম্যান নিতাই অধিকারী মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে তাকে রক্ষা করেছেন। গত সোমবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে যশোর রাজারহাট রেলক্রসিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। খগেন মন্ডল মণিরামপুর পৌরসভার তাহেরপুর গ্রামের কাইপুত্র-মন্ডল পাড়ার রবিন তরফদারের জায়গায় কুড়ে ঘর বেধে বসবাস করেন।
রাজারহাট রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান নিতাই অধিকারী জানান, ঘটনার সময় দ্রুতগামী রকেট এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় তিনি যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের রেলক্রসিংয়ের গেট বন্ধ করেন। এসময় তিনি পাশে দেখতে পান এক ব্যক্তি ট্রেন লাইনে মাথা দিয়ে পড়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যে তিনি তাকে ট্রেনলাইনের উপর থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিরাপদে নিয়ে যান। এরপর মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করে।
গেটম্যান নিতাই অধিকারী আরো জানান, তিনি মনে করছিলেন ওই অচেনা ব্যক্তি ট্রেন দেখার জন্য এসেছিলেন। পরে তিনি সত্তরোর্ধ ওই ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানতে পারেন তিনি আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। পরে সন্ধ্যার দিকে যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে মণিরামপুর কাইপুত্র পাড়ায় পৌছে দেয়া হয়। ওই পাড়ার রবিণ তরফদার জানান, ভূমিহীন খগেন মন্ডলসহ তার পরিবারের মাথা গোজার কোন ঠাঁই না থাকায় দীর্ঘ ২০/২৫ বছর ধরে তারা তার জায়গায় বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি রবিণ তরফদার তাদেরকে অনুরোধ করে বলেছেন, অন্যকোন জায়গায় চলে যেতে।
এ ব্যাপারে খগেন মন্ডলের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অনেকটা ভারসাম্যহীন থাকায় তেমন কিছু বলতে পারেননি। এসময় কথা হয়, তার স্ত্রী মায়া রাণী মন্ডলের সাথে। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এর আগেও একবার তার স্বামী খগেন মন্ডল এলাকায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যাসহ ৪ জনের হতদরিদ্র পরিবার। তাদের কন্যা শিল্পীর বিয়ে হয়ে শশুরবাড়ি গেলেও রোজগারের একমাত্র পুত্র শংকর পালে শুকর চরিয়ে বেড়ায়। একই পাড়ার কৃষ্ণ কুমার বলেন, খগেন মন্ডলের বয়ষ্ক ভাতার কার্ড থাকলেও সরকারিভাবে অথবা, কেউ যদি তাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতেন তাহলে ভূমিহীন ওই পরিবারটি উপকৃত হত।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খগেন মন্ডলের বিষয়টি দুঃখজনক। তার পরিবারের সাথে কথা বলে কষ্টের বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজেই এ ব্যাপারে পৌর সভায় জানিয়েছি। আশাকরি আগামীতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা খগেন মন্ডলের ঘর পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন