শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

কৃষ্ণ নন্দী সবসময় সুবিধাবাদী অবস্থানে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষ্ণ নন্দী। ডুমুরিয়া সনাতন শাখার সভাপতি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের প্রার্থী। তিনিই সংগঠনের প্রথম হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থী। হিন্দু অধ্যুষিত দাকোপ ও বটিয়াঘাটার সনাতনী ভোট নিজেদের কবজায় আনতে এ নয়া কৌশল। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে তার অতীত কিছু কর্ম সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জনগণের সামনে চলে এসেছে। নানা বিশ্লেষণ শুরু করেছে খুলনা-১ আসনের ভোটাররা। সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

খুলনা জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চুকনগর বাজারে কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি। প্রায় আড়াই যুগ ধরে তারা পারিবারিকভাবে চুকনগর বাজারে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। রয়েছে মটর সাইকেল, সয়াবিন তেল, মবিল, রড, সিমেন্ট, ঢেউটিনসহ হরেক রকমের ব্যাবসা।

রাজনৈতিকভাবে ৯০ এর দশকে কৃষ্ণ নন্দী, তার বাবা কালিপদ নন্দী ও তার সহদরেরা জাতীয় পার্টির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ বদরুজ্জামান তছলিমের সাথে সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অবঃ) এইচ এম এ গফফার বীর উত্তম এর খুব ঘনিষ্টজনে পরিণত হন তিনি। তছলিমের সহধর্মিণী সাবেক মন্ত্রীর ভাইঝি ফারজানা আফরোজ মুক্তা বলেন, “তার বাবা ও পরিবারের সকলেই জাতীয় পার্টির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।”

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে বদরুজ্জামান তছলিম বিএনপিতে যোগদান করেন। দলে নাম না লেখালেও কৃষ্ণ নন্দী তার সহচর হিসেবে ছিলেন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর সনাতনী তকমা গায়ে দিয়ে নিজেকে ওই সংগঠনের নেতাদের সাথে মানিয়ে নেন। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর খুলনা-৫ আসনের তৎকালীন এমপি বর্তমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

জনশ্রুতি রয়েছে ২০০৫ সালে তিনি জামায়াতের ফরমও পূরণ করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আবারও তৎকালীন এমপি সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কল্যাণে নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে নেন কৃষ্ণ নন্দী। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ চুকনগরে গেলে মমতা বস্ত্রালয়ের মালিক মহাদেব সাধু, আদর্শ বন্ত্রালয়ের মালিক জয়দেব আর্ঢ্য, প্রল্লাদ ব্রম্ম, আশুতোষ নন্দীসহ অধিকাংশ হিন্দু নেতা উপস্থিত থাকতেন। পশ্চিম ডুমুরিয়ার ২ ইউনিয়নের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকলে প্রায়ই তিনিসহ এসব নেতাদের নীতি নির্ধারণে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্রের বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ডাক পড়ত।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, “তার কারণে অনেক সময় সাবেক মন্ত্রীর কাছে আমরা ভিড়তে পারতাম না।”

নারায়ণ চন্দ্রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটানোয় এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের দিন বিকেলে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ওই সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি জামায়াতের হিন্দু নেতা হিসেবে সামনে আসেন।

জামায়াতের বিভিন্ন সভা সমাবেশে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। জামায়াত গঠন করে সনাতন শাখা। ওই শাখার ডুমুরিয়া কমিটির সভাপতি করা হয় তাকে। তার সভাপতিত্বে ডুমুরিয়া স্বাধীনতা চত্বরে হিন্দু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১ নভেম্বর খুলনায় ৮ দলের মহাসমাবেশে জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান যোগ দেন। ওই দিনই তাকে খুলনা-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ঘোষণা দেন তিনি। ইতোমধ্যে তার অতীত নানা কর্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে থাকায় শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন