রবিবার । ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ । ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অতিথি পাখি শিকারে তৎপর শিকারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতের শুরুতে শীতপ্রবন দেশগুলি থেকে জীবন বাঁচাতে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। বিশেষ করে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চলসহ হিমালয়ের আশপাশের অঞ্চল থেকে পাখিরা আসতে থাকে কম ঠান্ডা অঞ্চলে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো খুলনার বটিয়াঘাটা দাকোপ, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, কয়রাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাওড়, বাওড়, বিল ও জলাশয়ে আশ্রয় নিচ্ছে এসব অতিথি পাখি। এদিকে পাখি আসার সাথে সাথে শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেছে। গভীর রাত থেকে ভোর, এমনকি দিনের বেলাতেও বিভিন্ন ধান খেত ও খোলা মাঠে অতিথি পাখি শিকারে তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

পাখি ধরার কাজে ব্যবহার জন্য করা হচ্ছে নানা ধরনের সরঞ্জাম ও ফাঁদ। পাখির ডাক ও সুর নকল করে বিশেষ যন্ত্র তৈরি করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইলেও ওই নকল ডাক ও সুর বাজিয়ে পাখিদের আকৃষ্ট করা হয়ে থাকে। নকল ডাক ও সুর শুনে সঙ্গীর সন্ধানে এসে ফাঁদে আটকা পড়ে বহু প্রজাতির পাখি। এছাড়া শিকারিরা ধান খেত ও ধানের উপরে নাইলনের সুতা দিয়ে এক ধরনের ফাঁদ তৈরি করে পাখি চলাচলের পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা উড়তে গিয়ে ওই ফাঁদে আটকা পড়ে। পাশাপাশি কেঁচো দিয়ে বরশি পেতে, কোচ মেরে এবং কারেন্ট জাল পেতে পাখি শিকার করছে অসাধু শিকারিরা। এছাড়া এবং ছোট ছোট পুঁটি মাছের পেটে কীটনাশক দিয়ে পাখির খাবার হিসেবে ধান খেতে ছড়িয়ে রাখে শিকারিরা। ওইসব মাছ খেয়ে দুর্বল ও অচেতন হয়ে পড়ে অতিথি পাখি। আর শিকারিরা সেইসব পাখি ধরে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শিকারিদের আটক করলেও মূল হোতারা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে গোপনে অতিথি পাখি বিক্রি শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকারি চক্রের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, শীতের শুরুতেই পাখি ধরা শুরু হয়েছে। তবে এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় দাম অনেক বেশি। জলকচু, ডঙ্কুর, আলতি, বয়া, নীলপরী, কাম, হাঁসপাখি, কড়া, কালিমসহ বহু নাম না জানা প্রজাতির অতিথি পাখি ধরা হচ্ছে। ডঙ্কুর ৪০০ টাকা, জল কচু ৩০০ টাকা, হাঁস পাখি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, আলতি ৬০ টাকা, কাম পাখি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

পাখি শিকারি বাবলু, মনি, আক্তারুল ইসলাম, নয়নসহ আরো অনেকে বলেন, “পাখি শিকার করা দ-নীয় অপরাধ। পাখির মাংস খেতে সুস্বাদু। তাই পাখি শিকার করি। বিক্রি করলে ভালো টাকাও পাওয়া যায়।” রিতা, অনিতা, আলম, শাহারুল সহ অনেকে বলেন, “রাতে বাসায় ও লীজঘেরে ঘুমানো যায় না শিকারিদের বাঁশির সুরে।”

বটিয়াঘাটা উপজেলা পাখি সংরক্ষণ পরিষদ ও পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য অলকেশ কুমার সরকার জানান, “পাখি শিকারিদের ধরতে আমরা রাতে ধান খেতে পাহারা দেই। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমরা পাখির সংরক্ষণসহ অবাধে পাখি শিকার রোধে কাজ করে আসছি। থানা পুলিশের সহযোগিতায় এই কর্মকাণ্ড চলমান রেখেছি।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সভাপতি আলকামা রমিন বলেন, “এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় পাখি সংরক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে একটি সংগঠন কাজ করতো। কিন্তু এখন আর তাদের সেই অ্যাক্টিভিটি নেই।”

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, “পরিযায়ী পাখিসহ দেশীয় পাখি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, গণসচেতনতামূলক সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। অতিথি পাখি শিকার করলে প্রথমবার সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ দু’বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন