সোমবার । ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

যুগ যুগের স্মরণীয় মজলুম নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মওলানা ভাসানী যেমন সুফি ছিলেন, তেমনি ছিলেন বাংলাদেশের পরিবেশবাদী আন্দোলনের অগ্রনায়ক। তিনি হাজার হাজার লোক নিয়ে লংমার্চ করেছেন ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে একটি নদী আটকে দিলে দেশে এর কী প্রভাব পড়বে। কারণ এটি আমাদের টিকে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার এ লংমার্চ তিনি না করলেও পারতেন। কেননা তখন তার বয়স প্রায় নব্বইয়ের বেশি। কিন্তু বাস্তব এই যে জীবন জুড়েই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিটা সংকট নিয়েই তিনি কথা বলেছেন। এ দেশে তার মতো রাজনৈতিকভাবে সঠিক লোক আরেকটা পাওয়া কঠিন। যদিও অনেকে তার ভোটের রাজনীতি না করার প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেন। যেমন দক্ষ রাজনৈতিক ছিলেন, তেমনি রাজনীতির সরল কথকও ছিলেন। কিন্তু মওলানা ভাসানীর বক্তৃতার মধ্যে কঠিন গাল ভারি কোনো তাত্ত্বিক শব্দের ব্যবহার থাকত না। তিনি জীবনভর আন্দোলন আর রাজনৈতিক দর্শনকে সরল করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন। এসব ক্ষেত্রে কখনও তিনি অনেক লোকের সঙ্গ পেয়েছেন, অনেক অনুসারী পেয়েছেন।

পাকিস্তানের ইতিহাস মূলত আমরা বঞ্চনার জায়গা থেকে পড়ি। অনেকেই মনে করেন এ ইতিহাস স্নায়ুযুদ্ধ দিয়ে প্রভাবিত। অনেকে মওলানা ভাসানীকে স্নায়ুযুদ্ধের অংশীজন মনে করেন। এমনকি তাকে সিআইএ’র এজেন্টও মনে করেন অনেকে। বামপন্থিদের মতে, মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের কিছু কিছু জায়গায় আপোশ করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার জীবনী পড়লে বোঝা যায়, তিনি কতটা সহজ-সরল ও যে-কোনো আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। নিজের ধর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতায় তার ধর্মবিশ্বাসের কথা উঠে আসেনি। কখনও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কথা চিন্তা করেননি। নিজের সন্তানদের তিনি কখনো সামনে আনেননি। সত্তরের দশক কেটেছে দাঙ্গার মধ্যে। সেই সময়ও তিনি ছিলেন অহিংস প্রকৃতির মানুষ।

তিনি অসম্ভব আশাবাদী একজন মানুষ ছিলেন। মারা যাওয়ার সময়ও তিনি আশাবাদী ছিলেন। তার আশার কোনো শেষ ছিল না। তিনি যেমন সর্বদা কাজের মধ্যে থাকতেন, তেমনি আশায় থাকতেন। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে নানা টানাপড়েন আসে। আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। অফিসে বসের একটা ঝাড়ি খাওয়ার পর মনে হয় চাকরি ছেড়ে চলে যাই। আশাহত হই আমরা। আবার তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও রাজনৈতিক জীবন সর্বদা স্বতন্ত্র ছিল। তার মাথায় টুপি ছিল কিন্তু সেই টুপির গল্প কেউ কোনোদিন শোনেনি। এমনকি যারা তার সংস্পর্শে ছিলেন, তারাও কোনোদিন শোনেননি। তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না যেমন, তেমনি আবার ধর্ম গত দিক থেকে কোনো ধরনের সংকীর্ণতায় ভুগতেন না। তিনি যেখানে গিয়েছেন, কথা বলেছেন। বিদেশে গিয়েছেন, চিন্তামুক্ত থেকেছেন। কারণ তার কোনো কিছু লোক দেখানো, বানোয়াট ছিল না। তিনি সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্যে থেকেছেন। তারা সততা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। একটা ভাস্বর জীবন কাটিয়েছেন। আমি এসব ভাবি আর চিন্তা করি যে আমরা কেন এমনটা পারি না।

 

খুলনা গেজেট্/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন