বৃহস্পতিবার । ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২১শে কার্তিক, ১৪৩২
পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাস উৎসব

তিন দিনে ৩২ শিকারি আটক, ট্রলার ও ফাঁদ জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বঙ্গোপসাগরের পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের দুবলারচর আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিনদিন ব্যাপি রাস উৎসব শেষ হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু ভক্তবৃন্দ আলোরকোল সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে নেমে স্নান করেন। পানির মধ্যেই নানা ধরনের প্রার্থনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পরে পূজা-আর্চনা সম্পন্ন করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন ভক্তবৃন্দরা।

গত সোমবার সকালে বন বিভাগ ও পুলিশ সদস্যদের প্রহরায় নদীপথে রাস উৎসবে যায় পূন্যার্থীরা। সন্ধ্যায় দুবলার চরের আলোরকোলে পৌঁছে তারা পূজা করেন। পরের দিন মঙ্গলবার সারাদিন পূজা আর্চনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা, গাজীকালুর পূজাসহ নানা আচার আচরণ পালন করেন পূন্যার্থীরা। রাতেও পূজা আর্চনার মধ্য দিয়ে কাটে পূণ্যার্থীদের সময়।

এবার রাস পূজা উপলক্ষ্যে মেডিকেল টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ টহল টিমসহ বনবিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্যদের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ থাকার পরেও নানা কৌশলে তারা বনে প্রবেশ করেছেন। হরিণ শিকারসহ নানা অপরাধের চেষ্টা করেছেন।

রাস পূজার প্রথম দিন অর্থ্যাৎ ৩ নভেম্বর দুপুরে হরিণ শিকারের ফাঁদ পাতার সময় একজনকে আটক করে বনরক্ষীরা। এসময় ওই শিকারির সাথে থাকা অন্য শিকারিরা বন কর্মকর্তার উপরে হামলা করেন। হামলায় সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে এঘটনায় রাফি হাসান (২৬),শহিদ মল্লিক (২৮) ও আল আমিন আকুঞ্জি (২৭) নামের তিন শিকারিকে আটক করে আদালতে পাঠায় বন বিভাগ।

এছাড়া এই তিন দিনে ব্যাপকভাবে হরিণ শিকারের চেষ্টা করেছেন পুণ্যার্থীর ছদ্মবেশে বনে প্রবেশ করা অপরাধীরা। তিন দিনে ৩২ জন হরিণ শিকারিকে আটক করেছে বন বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া হরিণ শিকারের কাজে ব্যবহৃত দুটি ট্রলার ও বিপুল পরিমাণ হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করেছে বন বিভাগ। এছাড়া নদী পথে যাওয়ার সময় যাচাই-বাছাই শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তত শতাধিক মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে পুণ্যস্নানের সময় পুণ্যার্থীরা সাগরে প্রসাদ দেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যবহার করেছেন। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

রাস উৎসব উদযাপন পরিষদ ও দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্গম বঙ্গোপসাগর পাড়ে প্রায় ২৩০ বছর ধরে চলে আসছে হিন্দু ধর্মের এই রাস উৎসব। এবারের রাস পূজা বনবিভাগ ও একাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরি বলেন, “এবার রাস উৎসব উপলক্ষ্যে বন বিভাগ, পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিল। এরপরেও ছদ্মবেশে পরিচয় গোপন করে কিছু মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বনে প্রবেশ করেছেন। হরিণ শিকারের প্রস্তুতির সময় বন কর্মকর্তাদের উপর হামলাও করেছেন শিকারিরা। এই সময়ে আমরা ৩২ জন শিকারিকে আটক করেছি। বিপুল পরিমাণ শিকারের ফাঁদ ও দুটি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। এসব নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন