সুন্দরবনের আলোরকোলে রাস উৎসবের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ, রাস পূজা উদ্যাপন কমিটি ও সংশ্লিষ্টরা। বন্যপ্রাণী শিকার রোধ ও বিশৃখলা এড়াতে এবারই প্রথমবার পুণ্যার্থীদের নেওয়া হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায়। অন্যদিকে উৎসব উপলক্ষ্যে মেলার আয়োজন না থাকায় সনাতনী ছাড়া অন্য কাউকে বনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
আজ সোমবার ৩ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত রাসপূর্নিমা উপলক্ষ্যে সুন্দরবনের আলোরকোলে রাস পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষ্যে বনের মধ্যে প্রতিমা তৈরি, পূন্যাথীদের যাওয়া-আসার পথ নির্ধারণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ।
আজ সোমবার সকালে পুণ্যার্থীরা নৌপথে রওনা দিবেন সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে জনমানব শূন্য বনে সমুদ্রের পানিতে পুণ্য স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন করার উদ্দেশ্যে রাস পূজায় যাবেন পুণ্যার্থীরা। নিজের মনোবাসনা পূরণের পাশাপাশি দেশের শান্তি কামনা করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
আলোরকোল রাস পূজা উদ্যাপন কমিটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার দাস বলেন, “গেল বছর ২০ হাজার পুর্ণ্যার্থী রাস পূজা উদ্যাপন করে। এবার ৩০ থেকে ৪০ হাজার পুণ্যার্থী রাস পূজায় যাবে বলে তাদের ধারণা।”
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, “বন বিভাগ বলছে, রাস পূজায় মেডিকেল টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ টহল টিমসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন যাতে কেউ হরিণসহ বন্য প্রাণী শিকার করতে না পারে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এবারই প্রথম পুণ্যার্থীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারার (স্কট) মধ্য দিয়ে নেওয়া হবে। সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক যাতে বনের মধ্যে না ফেলা হয়, সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই সাথে অসৎ উদ্দেশ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়া ভিন্ন ধর্মের লোকজন যাতে এই সময়ে বনে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য তল্লাশি করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।”
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, “রাস উৎসব নির্বিঘ্নে করার জন্য বন বিভাগের সাথে র্যাব, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী ও জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। পূজা উদ্যাপনের জন্য যে-সব স্থানে থেকে পুণ্যার্থীরা যাবে সেসব স্থানে পুলিশের তল্লাশি টিম থাকবে। এছাড়া পূজার আড়ালে যাতে কেউ হরিণ শিকার, বন্যপ্রাণী পাচার বা নারী-শিশুদের বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ সদস্যরা।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ও স্থানীয়দের মতে প্রায় ২৩০ বছর ধরে সুন্দরবনের আলোরকোলে পূর্ণিমা তিথিতে রাস পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে রাসপূজা উপলক্ষ্যে মেলায় লক্ষাধিক ভক্ত-দর্শনার্থীদের সমাগম হতো। তবে করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সাল থেকে রাস পূজা উপলক্ষ্যে মেলা বন্ধ করা হয় এবং মুসলিমদের যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম

