বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
কেটে ফেলা হয়েছে একটি হাত ও পায়ের দু’আঙুল

পল্লী বিদ্যুতের অরক্ষিত ঝুলন্ত তারে জড়িয়ে মৃত্যুশয্যায় স্কুলছাত্র সামির

অভয়নগর প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগরে নির্মাণাধীন ইপিজেড’র মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের অরক্ষিত ঝুলন্ত তারে জড়িয়ে মৃত্যুশয্যায় মহাকাল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামির। গত ২৮ সেপ্টেম্বর অষ্টম শ্রেণির তিন শিশু রকি স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে ইপিজেড এর মধ্যে ঘুরতে যায়। সেখানেই ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দুই সহপাঠী আলিফ এবং সাব্বির ঘরে ফিরলেও স্বামীর এখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু শয্যায়। ইতোমধ্যে তার একটি হাত এবং দু’পায়ের দুটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। গত শনিবার সামিরের পায়ের আরও দুটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে যেখানেই পচন ধরবে সেখানেই কাটতে হবে। যে হাত কাটা হয়েছে সেটি যদি পূর্ণাঙ্গভাবে না সেরে ওঠে তাহলে সেখানে অস্ত্রপাচর লাগতে পারে। এভাবেই বার্ন ইউনিটের শয্যায় দিন কাটাচ্ছে সামিরের।

তার সঙ্গে থাকা দুই সহপাঠী বন্ধু বিল্লাল এবং আলিফ জানায়, স্কুল ছুটির মধ্যে তারা প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে ইপিজেডের মধ্যে ঘুরতে যায়। তিন বন্ধু আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে থাকা পাইপের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সামির পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় মাথার উপরে থাকা তারটি ধরে বসে। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ঝাড়া মেরে ফেলে দেয় নিচে। তখন তার সহপাঠীরা দুই-তিন ফুট দূরে অবস্থান করছিল। নইলে তাদের আজ ঘরে ফেরা সম্ভব হতো না। মাটিতে পড়লেই সহপাঠীরা দেখতে পায় তার পা থেকে গায়ে আগুন জ্বলছে। চিৎকার চেঁচামেচির পর লোকজন এসে ধরাধরি করে তাকে ইপিজেড এর একটি গাড়িতে করে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পিতা চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মুরাদ হোসেন ফোন পেয়ে হাসপাতালে এসে ছেলের করুন অবস্থা দেখতে পান। অর্ধমৃত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তারপর অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানান, কমপক্ষে ১০-১২ ফুট উঁচু করে বালি ভরাটের কারণে পল্লি বিদ্যুতের তার অনেক নিচে নেমে আসে। তা ছাড়া দুটি পুল মাটির দিকে অরক্ষিত অবস্থায় ঝুলে আছে।

ইপিজেড এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেজবাউল সবুজ জানান, দুর্ঘটনা স্থলের দু’পাশে দুটি কাঠেরপুল কাত হয়ে পড়ায় তার নিচে ঝুলে পড়েছিল। এ ব্যাপারে পল্লি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি। পল্লি বিদ্যুৎ তাদের জানিয়েছে নিচের তারের লাইন অফ করে রাখা হয়েছে। এ দায় কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের নয় পল্লি বিদ্যুতের, কারণ তাদেরকে পূর্বেই অবগত করানো হয়েছিল।

সামিরের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ এবং ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসবাউল হোসেন জানান, তাদের ওইরকম কোন ফান্ড নেই। অন্য জায়গা থেকে কালেকশন করে কিছু সহযোগিতা তাদের করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন। যদি সম্ভব হয় আরো কিছু সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তারা অস্বীকৃতি জানান।

যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির নওয়াপাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম সঞ্জয় কুমার মন্ডল জানান, পল্লি বিদ্যুতের নিচের তারে কোন লাইন ছিল না। বিদ্যুৎ অফ করে রাখা হয়েছিল। তাহলে দুর্ঘটনা কীভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব থেকে উপরে এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের যে বিদ্যুতের তার ছিল তার ইন্ডাকশনে নিচের তারে দুর্ঘটনা হয়ত ঘটতে পারে। এ দায় কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর উত্তর এক কথায় দেওয়া যায় না। ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অবগত করানো হয়েছিল সেখানে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে।

বালি ভরাটের কাজে নিয়োজিত খোকন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন এর ম্যানেজার খলিলুর রহমান খলিল জানান, এগুলি তাদের বিষয় নয়, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং পল্লি বিদ্যুৎ এর এর ব্যাপার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন