ক্ষমতাচ্যুত সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতকে মোংলা বন্দর লিজ দিতে চেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরের কাছাকাছি এ বন্দর দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সুবিধা হতো। ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোই পণ্য সরবরাহ করতে কার্গো পরিবহনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভোগ করছে প্রতিবেশী দেশ।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক কারণে মাত্র ৩ বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় মোংলায়। মূলত ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘দ্য সিটি অব লিয়নস’ নামের ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের মধ্যে দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল এ জাহাজ।
সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগের পাশাপাশি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলো ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (ওচএখ)। তৎকালীন সরকার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি ভারতের কাছে লিজ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় প্রতিনিধি দল মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে। তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যদি সম্মতি দিত, তাহলে মোংলা বন্দর পরিচালনায় ভারতও যুক্ত হতে পারে এমন ইঙ্গিত মিলেছিল সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।
নৌপরিবহণ ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল মুকুন্দনের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় আইপিজিএলের উচ্চপদস্থ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বন্দরের জেটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন শেষে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বন্দরের কার্যক্রমের একটি সারাংশ উপস্থাপন করা হয়।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান বাংলায় “মিলল মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি, বাংলাদেশের পিচে চীনকে ‘আউট’ করল ভারত” শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতকে ঘিরে ধরতে চীনের নজর বাংলাদেশের ওপর। তবে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের পিচে এগিয়ে গেল মোদী সরকার।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুসারে এ বন্দরের ওই টার্মিনাল পরিচালনা করবে ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড। রিপোর্ট অনুযায়ী, হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ই মোংলা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। এই বন্দরের পরিচালনার ভার পেলে কৌশলগতভাবে ফ্রন্টফুটে থাকতো ভারত।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মোঃ মাকরুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন, “ভারতীয় প্রতিনিধি দল বন্দরের সক্ষমতা, সুবিধা, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, ইয়ার্ড ও জেটি পরিদর্শন করেছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো আইপিজিএল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব পায়নি। তখন আইপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল মুকুন্দন গণমাধ্যমকে বলেছেন, দুই দেশের সরকার যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিলেই পরিকল্পনাটি এগিয়ে যেতে পারে।
মোংলা সমুদ্র বন্দরে বর্তমানে পাঁচটি জেটি রয়েছে যেখানে কনটেইনার ও বাল্ক-ক্যারিয়ার জাহাজ উভয়ই পরিচালনা করা হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর বন্দর ব্যবহারে জাহাজের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় বন্দরের ক্ষমতা বাড়াতে আরও দুটি জেটি নির্মাণাধীন রয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমিয়ে আনার পাশাপাশি দ্রুত এবং সস্তায় পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনের সুবিধার্থে শিগগিরই রেলপথ চালু হবে।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে সাত অঙ্গরাজ্যে কার্গো পরিবহনের জন্য ভারতকে স্থায়ী ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। বন্দরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই টার্মিনাল নির্মাণসহ উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নের জন্য অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম