তালা থেকে পাইকগাছা হয়ে কয়রা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে ধীরগতিতে। ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়ক উন্নয়ন কাজটি তিনবার সময় বাড়ালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো শেষ করতে পারেনি। সর্বশেষ সময় অনুযায়ী চলতি ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এখনও অর্ধেক কাজ শেষ হয়নি। আর বাকি এ কয়দিনে কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে।
তালার আঠারোমাইল থেকে খুলনার কয়রা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরন ও বাঁক সোজা করার কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্পটি তিন দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারীতে তালা-কয়রা ভায়া পাইকগাছা সড়ক যথাযথ মানে উন্নতি করণ প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। দরপত্র শেষে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। ২৯ ডিসেম্বর তাদের ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতার কারণে তিন দফা এক বছর করে সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয় ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের মধ্য থেকে তিন কিলোমিটার অংশের জন্য আলাদা করে ব্যয় বাড়ানো হয় আরো ৫৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট প্রশস্তকরণের জন্য বরাদ্দ করা হয় আরো ১শ’ কোটি টাকা। এভাবে প্রকল্পের ব্যয় ১৯৫ কোটি বেড়ে ৫৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধীরগতিতে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। বাঁক সোজা করার কাজ ৮০ ভাগ শেষ হলেও সড়ক প্রশস্ত করার কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। অনেক জায়গায় ১০ ভাগও কাজ হয়নি। তবে এসব কাজ করার কারণে পথচারীসহ যানচলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
একাধিক পথচারী জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া ও কয়েকবার বার সময় বাড়ানোর ফলে বিড়ম্বনা বেড়েছে সড়ক ব্যবহারকারীদের। চলাচলের সময় ধুলাবালিতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচলে। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে চরম সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালে যেতে রোগীদের রাস্তার মাঝেই কেটে যায় দীর্ঘ সময়।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে এলাকার মানুষ সন্দেহ পোষণ করলেও আশাবাদী সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সড়ক বিভাগ জানায়, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৩০ টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা। এতে ১১.২৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কিছু জমি জায়গা নিয়ে মামলা মোকদ্দমার ঝামেলা পোহাতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সরকার পতনের সময় বেশকিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর থেকে আবার পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনও অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারেনি। দু-এক দিনের মধ্যে তারা চলে আসবে।
মাইক্রো ড্রাইভার মনজুরুল ইসলাম বলেন, “আগে তালা থেকে কয়রা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো, আর এখন রাস্তায় কাজ করার কারণে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। গাড়িতে তেল খরচ হচ্ছে বেশি। ফলে যাত্রীদের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে।”
ভ্যানে চলাচলকারী মোবারকপুরের হাসেম আলী সর্দার বলেন, “এক রাস্তা সংস্কার করতে আর কত বছর লাগবে। ৩ বছর তো হয়ে গেলো। ধুলোবালি আর বৃষ্টির সময় কাদা পানিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে।”
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, “প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে তিনবার সময় বাড়াতে হয়েছে। এখন দ্রুত গতিতে বাঁক সোজা করার কাজ চলছে। এছাড়া সড়ক প্রশস্ত করার কাজ হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি।” তবে অনেক চেষ্টা করেও ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্বতা দীপা রানী সরকার বলেন, “আমি ঠিকাদারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। কাজ চলমান থাকলেও ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”
খুলনা গেজেট/এনএম