খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  আজ বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন

কয়রায় মুর্হূতেই ভেঙে পড়ল বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার

গেজেট ডেস্ক

খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে কয়রা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/ ২ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি স্থানের ৩০০ মিটার নদে ধসে পড়ে।

এই ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

হরিণখোলা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদে অন্তত ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়। আজ ভোরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধসের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজনের চোখের সামনে ভাঙনরোধে পাউবোর দেওয়া জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ফসলি জমিসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

আজ সকালে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের যে কয়টি স্থান ধসে গেছে, এর সব জায়গায় মাটি সরে গিয়ে মধ্যের বালু বেরিয়ে গেছে। ওই বালুতে পানির ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। নদের পানির গতিপথ পাল্টে বেড়িবাঁধের গায়ে আছড়ে পড়ছে। ধসে যাওয়া স্থানগুলোয় সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন, আবার কেউ বাঁধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধের স্থানে দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজ শেখ মাটি কেটে বাঁধের ধসে পড়া স্থানে দিতে দিতে বললেন, ‘আমরা কাছে বাসিন্দারা বাঁধ রক্ষায় আগাই না আসলি এ বাঁধ বানতি অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। বাঁধ মেরামত যাদের দায়িত্বের মধ্যি পড়ে, তারা কেউ সময় থাকতি এগোয় না। যত মরণ আমাগের মতো খাইটে খাওয়া মানুষের।’

হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাঁধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে দুর্বল হয়ে এখন একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই বাঁধ ধসে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য নদের তীরে পাকা ব্লক দেওয়া দরকার।

কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গোবরা গ্রামের স্কুল শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘হরিণখোলা গ্রামের পাশের ওই বাঁধকেই বলা হতো কয়রার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০২১ সালে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে সেখানে যত বড় প্রকল্প ছিল, কাজ তত ভালো হয়নি। অধিকাংশ স্থানে বাঁধের দুই পাশ ও ওপরে মাটি দিয়ে ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকে ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, গতকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার বেড়েছিল। কয়রার হরিণখোলা এলাকার বেড়িবাঁধে ধস এবং চৌকুনি এলাকায় কয়রা নদীর বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছিল। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙনকবলিত স্থানে উপসহকারী প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করেছেন। আপাতত ভাঙনের পরিধি যাতে না বাড়ে এ জন্য বাঁধের গায়ে জিও ব্যাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!