আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় বাংলাদেশ গার্লস্ গাইডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খুলনার শিরোমণির সাহসী কণ্যা তাসমিয়া রশিদ নওরীন। তিনি খুলনার আযমখান সরকারি কমার্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মুহাম্মদ আশরাফের নাতনী। পিতা প্রফেসর ড. মিয়া আব্দুর রশিদ একজন শিক্ষক, যিনি শুরু থেকেই মেয়েকে শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাসমিয়া রশিদ নওরীন। বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডায়, আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম YESS Girls Movement: ২০২৫-এর আওতায় একজন Volunteer Participant হিসেবে। YESS (Youth Exchange South to South) Girls Movement হল একটি আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব উন্নয়নমূলক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশের গার্ল গাইড সদস্যরা অংশ গ্রহণ করে। এই কর্মসূচি পরিচালিত হয় World Association of Girl Guides and Girl Scouts (WAGGGS) এর তত্ত্বাবধানে এবং Norwegian Agency for Exchange Cooperation (NOREC) এর অর্থায়নে। প্রোগ্রামের আওতায় ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী রেঞ্জার সদস্যরা অন্য দেশের গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনে গিয়ে নেতৃত্ব বিকাশ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং গাইডিং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন ২০১৮ সাল থেকে এই প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট চারজন রেঞ্জার সদস্য অংশ নিচ্ছেন উগান্ডা, মালাউই, মাদাগাস্কার ও নেপালে। এরমধ্যে নওরীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উগান্ডায় অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, নওরীন যশোর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে বিএসসি (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন। পরে তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কটঊঞ) অধীনে ডিপ্লোমা ইন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেন। বর্তমানে তিনি এমএসসি ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নওরীনের সফলতার পেছনে রয়েছে তার পরিবারের অবদান। পিতা প্রফেসর ড. মিয়া আব্দুর রশিদ একজন শিক্ষক, যিনি শুরু থেকেই মেয়েকে শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। মা ও পরিবারের ভালোবাসা তাকে চলার পথে শক্তি যুগিয়েছে।
শৈশব থেকেই সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন নওরীন। সেই স্বপ্নের পথচলা শুরু বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন এর মাধ্যমে। বর্তমানে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তার কাজের ক্ষেত্র বিশেষভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নেতৃত্ব গঠন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশ সচেতনতা এই বিষয়গুলোর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
নওরীন বলেন, আমি বিশ্বাস করি, দেশের সেবা করার মাধ্যমেই নিজের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আমি চাই, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি আরও উজ্জ্বল হোক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
নওরীন এর এই অর্জন প্রমাণ করে একজন তরুণের দৃঢ় ইচ্ছা, শ্রম ও সাহস থাকলে সে শুধু দেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গর্বের সঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তার পথচলা নিঃসন্দেহে আজকের তরুণদের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার গল্প।
খুলনা গেজেট/এমএনএস