খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের কুঠিরচরে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
  বাংলাদেশে দেখা গেছে জিলহজের চাঁদ, পবিত্র ঈদুল আজহা ৭ জুন
  ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও নির্বাচন আয়োজনের পথে মিয়ানমারের জান্তা
  সব মামলা থেকে দণ্ড ও সাজা মুক্ত হলেন তারেক রহমান
  চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে জুলাই আহত-স্টাফ সংঘর্ষ, সেবা বন্ধ

নির্বাচন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে, শিগ‌গিরই রোডম্যাপ

গেজেট ডেস্ক

বহুল আলোচিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সম্ভাব্য তারিখ ৯, ১০ কিংবা ১১ ফেব্রুয়ারি। ১০ তারিখে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশি। নির্বাচন কমিশনও এজন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ শীঘ্রই দেশবাসীকে জানানো হবে। এর ফলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপদেষ্টা পরিষদ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনাকে সমন্বয় করে সরকার নির্বাচনের এ তারিখ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব ফ্যাসিবাদীদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করা হবে। সময় স্বল্পতার কারণে যেসব সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না, সেগুলো সম্পন্নের দায়িত্ব নতুন সরকারের ওপর বর্তাবে। সময়ের অভাবে সরকার কোন কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি, তার একটি চিত্র বিদায়ের আগে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান শুরু হবে ১৭ কিংবা ১৮ ফেব্রুয়ারি। রোজা এবং ঈদুল ফিতরে কেটে যাবে মার্চ মাস। এপ্রিল, মে, ও জুন মাস কেটে যাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং ঈদুল আজহা উদ্যাপনে। তাছাড়া অতিরিক্ত গরম এবং ঝড়-বৃষ্টির কারণে ওই মাসগুলো নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্তও নয়। এসব কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসকে বেছে নেওয়া হচ্ছে।

দেশে ইতোপূর্বে ১২টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় দুটি করে নির্বাচন। একটি করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মে, জুন এবং অক্টোবর মাসে। ফেরুয়ারির মাঝামাঝিতে শীতের তীব্রতা কিছু কমে আসে। আবহাওয়া ভালো থাকে। কৃষকের হাতে কাজের চাপও তূলনামূলক কম থাকে। এজন্য আগামী নির্বাচনের জন্য এ সময়কে বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে এখন নির্বাচনই প্রধান আলোচ্য বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। এতদিন তারা নির্বাচনী রোডম্যাপের জন্য চাপ দিলেও তাদের সর্বশেষ অবস্থান ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিচার-সংস্কারকে গুরুত্ব দিলেও তারাও নির্বাচনী রোডম্যাপ চায়।

অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদীদের বিচার ও রাষ্ট্রসংস্কার চায়। অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোও সংস্কার এবং বিচারের ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তাদেরও দাবি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামানও নতুন বছরে নতুন নির্বাচিত সরকার দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এমন একটি প্রেক্ষাপটে সবার মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের যে কোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনোভাবেই জুনের পরে হবে না। নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সরকারের সামনে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদীদের বিচার নিশ্চিত করা। তারা আশা করছেন, আগামী মাসের মধ্যে সংস্কারের একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

ফ্যাসিস্টদের বিচারের প্রক্রিয়াও গুছিয়ে এনেছেন তারা। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে দুটি করা হয়েছে। কাজ শুরু করেছে নতুন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক চার্জ গঠন এবং গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের পাশাপাশি পলাতক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন অব্যাহত আছে। সর্বশেষ পালিয়ে যাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে অপরাপর নেতার বিষয়েও কঠিন বার্তা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা রবিবার বলেন, দেড় হাজার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ নেওয়া বর্তমান সরকার যেনতেন একটা নির্বাচন করতে পারে না। গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে আমরা সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে চলেছি। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের প্রধান শরিক দল বিএনপি বরাবরই নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে। এজন্য সংস্কারের বিষয়েও তাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনমুখী।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরই বলে আসছেন, কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে এবং বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে। এর থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচনের তারিখ নিয়ে পুরোপুরি একমত হতে পারছে না। তাদের মতগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ভাবছে। তবে এর আগেই ফ্যাসিবাদীদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জোর সমর্থন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন এ উপদেষ্টা।

ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ ঘোষণার উদ্যোগকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী।

এমন কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে রবিবার তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যদিও বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। ডিসেম্বরে না হয়ে ফেব্রুয়ারিতে হলেও তেমন সমস্যা হবে না আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে হলেও তেমন সমস্যা নেই। কারণ, সরকার সক্রিয় হলে এ সময়ের মধ্যেই অনেক সংস্কার সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারগুলো জরুরীভিত্তিতে করা দরকার। একটি ভালো নির্বাচন দিতে পারলে অপরাপর সংস্কারের অবশিষ্ট দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের ওপর দিয়ে দেওয়া যাবে। তারা তখন সংস্কার বাস্তবায়নে জনগণের দ্বারা চাপে থাকবে। তবে যেসব সংস্কারের বিষয়ে সর্বদলীয় ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করা দরকার। আর যেসব সংস্কার প্রস্তাবে জোর আপত্তি নেই, সেগুলোর বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. আবদুল লতিফ মাসুম সোমবার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে সেটা হবে সব পক্ষের জন্য স্বস্তিদায়ক। দেশের জন্যও এটি হবে আশাপ্রদ সংবাদ। যদিও রোজার আগে নির্বাচন করার এ প্রস্তাব জামায়াতের।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে বিএনপির তাতে আপত্তি থাকার কথা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তারাও আশ্বস্ত হবেন। তারা তো শুরু থেকেই একটা রোডম্যাপ চেয়ে আসছেন। ডিসেম্বরের দাবি আমি মনে করি চাপ সৃষ্টি করার কৌশল। এক-দুই মাস কিছুই না। অন্য দলগুলোরও এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। সরকারের জন্যও এ সিদ্ধান্ত হবে মর্যাদাপূর্ণ।

তবে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপিকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রফেসর মাসুম বলেন, তারা যদি ঝামেলা কেউ, তবে তো সংকট থেকেই যাবে। গত কিছুদিন ধরে এনসিপি যেভাবে কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে তাদের এড়িয়ে কিছু করতে যাওয়াও সহজ হবে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের ম্যানেজ করে নিতে পারবেন। তারা এখন আর সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবে না। তারাও এখন চাপে আছে। নির্বাচনের তারিখ আরও আগে ঘোষণা করলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা অহেতুক সময়ক্ষেপণ করেছেন। প্রেসার না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো কাজই করছেন না। এটা ভালো লক্ষণ নয়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!