খুলনা, বাংলাদেশ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ডুমুরিয়ায় লরি-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৪
  মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩
  আজ খোলা থাকবে সরকারি অফিস

তেরখাদার ঐতিহ্যবাহী ইখড়ি পশুরহাটে কম দামে দেশি গরু

তেরখাদা প্রতিনিধি

মুসলিমদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ ঈদকে ঘিরে তেরখাদায় জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুরহাট। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইখড়ি পশুর হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি গরু-ছাগল উঠতে শুরু করেছে। তবে বেচাকেনা কম। ভারতীয় গরু না আসায় দেশী গরুর দাম শোচনীয় পর্যায়ে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে শুক্রবার (১৬ মে) ইখড়ি পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, নসিমন, ভটভটিসহ নানা রকম যানবাহনে হাটে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে আগত গরুর বেশির ভাগই স্থানীয় খামারিদের। মাঠ ও রাস্তার দু’পাশে সারি সারি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে গরু বাঁধার স্থান তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে তৈরি করা হয়েছে একাধিক শেড। পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য রাখা হয়েছে নিরাপদ পানি ও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা। তবে বেচাকেনা ভালোভাবে শুরু হতে আরও সময় লাগবে। এদিন বেলা এগারটার দিকে ইদু বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ী প্রথম দুটি গরু নিয়ে হাটে আসেন। তার দশমিনিট পরে মিলু মল্লিক নামে আরেক গরু ব্যবসায়ী আসেন আরও দুটি গরু নিয়ে। এমনিতে ঈদের দুই-তিনদিন আগে থেকে কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়।

এর আগে ভিড় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম থাকে। লোকজন আসেন, ঘুরে ঘুরে হাটে ওঠা পশু দেখেন। চলতি বছর ইখড়ি পশুর হাটটি ১ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন মিল্টান মুন্সি। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

মিল্টান মুন্সি জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এই হাটে গরু-ছাগল আসে। অনেক পাইকার ও খামারিরা ইতোমধ্যেই হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের স্থান নিয়েছেন। এছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে স্বেচ্ছাসেবকরা সব সময় মাঠে থাকবেন।

বিক্রেতা পরিতোষ রায় বলেন, আমি নিজেই গরু লালন-পালন করি। আজ ২টি দেশি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। বিক্রি ভালো হলে সামনে আরও গরু নিয়ে আসবো। তিনি আরও বলেন, এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেক বাড়তি। মানুষের খাবারের থেকেও গরুর খাবারের দাম বেশি। ভুষিসহ বিভিন্ন খাবারের দাম শতকরা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সেজন্য ভালো দাম না পেলে পোষাবে না। দেশে এখন ভারতীয় গরু আসেনি। তবে সামনেও যেন ভারতীয় গরু ঢুকতে না দেওয়া হয়। চাহিদা পূরণের জন্য দেশেই পর্যাপ্ত গরু রয়েছে বলে জানান তিনি।

ইখড়ি পশুর হাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী শওকত মোল্যা বলেন, এলাকার হাট হিসেবে বেশিরভাগ সময় এখান থেকেই পশু কেনেন স্থানীয়রা। ঈদের কাছাকাছি সময়ে বিক্রি বেশি হয়। এবার অধিকাংশ ক্রেতা খুঁজছেন মাঝারি আকারের গরু। হাটে আসা এসব গরু ৮০ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। তবে পশুরহাটে এবার ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর চাহিদা কিছুটা বেড়েছে।

পশু বিক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, গত বারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশ কম। এছাড়াও পশুর খাবারের দামের তুলনায় বাজারে পশুর দাম অনেকটা কম বলে তার দাবি।

এদিকে উপজেলার খামারি ও কৃষকদের দেশীয় প্রযুক্তিতে মোটাতাজাকরণ করা উন্নতমানের দেশি গরু কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে এসেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এবার গরুর দাম কম। আমিন নামে এক পাশ লেখক বলেন, কোরবানির হাট পরিপূর্ণ জমে ওঠতে আরও কয়েকদিন লাগবে। তখন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে আসবেন। বর্তমান হাটে যেসব গরু-ছাগল আসতে শুরু হয়েছে তার বেশিরভাগ স্থানীয়ভাবে লালনপালন করা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় ছোট বড় মিলে গরু মোটাতাজাজাতকরণ খামার রয়েছে ২ হাজার ৪১ টি, ছাগলের খামার ১৭৭২ টি এবং ভেড়ার খামার ১৪ টি। এসব খামারে প্রায় ১২ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২৩৪ টির মতো। কিন্তু খামারিরা প্রস্তুত করেছেন প্রায় ১২ হাজার মতো পশু। যা চাহিদার চেয়ে সাড়ে ৫ হাজার হাজারেরও বেশি। তাই, এবার উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে তেরখাদার খামারিদের প্রস্তুত করা পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে প্রায় বাড়িতেই রয়েছে ১ থেকে ৪ টি করে বিক্রির উপযুক্ত গরু ও ছাগল।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ অমিত রায় বলেন, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ওষুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে হাট কমিটির লোকজন ও পুলিশ তৎপর থাকবে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!