খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৭ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  ৫ ইউনিটের চেষ্টায় ভাষানটেকে বিআরপি বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে
  অর্থপাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ
  ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা মুশফিকের

‘অপহরণকারি ডাকাতদের অনেকে নামাজ পড়তো, মোনাজতে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতো’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সুন্দরবনের দুবলার চরের বাহির সাগর থেকে ১৫ জেলেকে অপহরণকারি ভয়ংকর ডাকাতদের কেউ কেউ নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। নামাজ শেষে মোনাজত করার সময় আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে কান্নাকাটি করতো। অপহৃতদেরকে সারাদনি এক কাপ পানি দিয়ে চলতে হতো। ট্রলারের পাটাতনের নিচে অন্ধকারের মধ্যে তাদেরকে রেখে দিত। অনেক সময় তাদের দিয়ে রান্না বান্নার কাজও করাতো। মাঝে মধ্যে আবার হুমকি ধামকিও দিতো। ডাকাতারা থাকতো রাজার হালে। রয়েছে তাদের কাছে ডাবল ব্যারেল বন্দুকসহ অনেক অস্ত্র।

মুক্তিপনের টাকা দিয়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের রুহুল আমিন ঢালরি ছেলে শাজাহান ঢালী ও দৃষ্টিনন্দন গ্রামের আনিচ সরদারের ছেলে নুরে আলম এসব কথা জানান।

শাজাহান ঢালী জানান, সাগর থেকে উঠিয়ে নেওয়ার পর আমাদের পনের জনকে ট্রলারের ফিসিংয়ের মধ্যে (যেখানে মাছ রাখে) ঢুকিয়ে দেয়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমরা কিছুই জানিনা। অনেক সময় পরে জঙ্গলের মধ্যে একটি খালে নিয়ে আমাদেরকে ফিসিংয়ের মধ্যে থেকে উঠিয়ে বোটের পাড়ানের নিচে ঢুকিয়ে রাখে। এসময় দু’টি পাড়ান উঠিয়ে রাখতো যাতে সেখানে আলো বাতাস ঢোকে। সেখানে অন্ধকার ছিল। কিন্তু আলো বাতাস পাওয়া যেত। ডাকাতরা অনেক সময় আমাদের দিয়ে রান্না করাতো। তারা নিজেরা যা খেতো, আমাদেরও তাই খেতে দিত। এরপরও আমরা সব সময় ভয়ে থাকতাম।

তিনি বলেন, ডাকাতার ৯ জন ছিল। তাদের কাছে একটি ডাবল ব্যারেল ও তিনটি সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুকসহ চারটি বন্দুক ও একটি পাইপ গান ছিল। তাদের দেখলে আমাদের ভয় করতো। তারা জঙ্গলের মধ্যে গাছের উপরে উঠে মোবাইলে কথা বলতো। মুক্তিপনের টাকা নেওয়ার জন্য তারা অপহৃতদের পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলতো। আমাদেরকে পারিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলিয়ে দিতো। বিকাশের মাধ্যমে তারা নিজেরাই তাদের মোবাইলে টাকা নিতো।

তিনি আরো বলেন, ডাকাতদের মধ্যে মিলন নামে একজনসহ আরো কয়েকজন নিয়মিত নামাজ পড়তো। আমাদের মধ্যে থেকে একজন অনেক সময় নামাজে ইমামতি করতো। নামাজ পড়ে মিলন ডাকাত নামাজের পাটিতে বসে মোনাজাত করা সময় আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে কান্নাকাটি করতো। তার কান্না শুনে আমাদেরও চোখে পানি চলে আসতো।

তিনি বলেন, মিলন একসময় খুবই ভয়ংকর ছিল। কিন্তু এখন ভাল হয়ে গেছে। আমাদের সাথে খুবই ভাল আচারণ করতো। আমাদের বলতো তোদের কোন সমস্যা নেই। তোরা ডাকাতদের সাথে কোন কথা বলবি না। কেউ তোদের গায়ে একটি নোখের আচঁড় দিতে পারবে না। তোদের টাকা গুলো কালেকশন করা হলে আমিও চলে যাবে। আমাকে যদি ওরা ছেড়ে দিতো তাহালে আমিও বেঁচে যেতাম। তবে তার কথা শুনে মনে হতো সেও কোন সমস্যায় পড়ে এদের সাথে রয়েছে।

জেলে নুরে আলম জানান, ডাকাতরা সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য একটি কার্ড দেয়। একটি কার্ডের দাম ৪০ হাজার টাকা। একবার এই কার্ড নিলে এক বছর আর কোন সমস্যা হবে না। আমরা যখন যাবো তখন এই কার্ড দেখালে তাদেরকে কেউ কিছু বলবে না। ডাকাতদের দেওয়া কার্ড হচ্ছে একটি ১০ টাকার নোট। তারা ওই ১০ টাকার নোটের সিরিয়াল নাম্বারটা (টাকার নাম্বার) তাদের ডায়েরিতে লিখে রাখে। এসময় একটি সিরিয়াল নম্বার দেয়। সিরিয়ালে জেলে, মাঝি ও বহদ্দারের নাম লেখা থাকে। সাগরে গেলে ওই ১০ টাকার নোট টা সাথে রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যদি আর কোন জেলে কার্ড করতে চায় তাহলে আমাদেরকে জানাবি। কার্ড না করলে এবার যদি ধরি তাহলে টাকা নিব চার লাখ করে। আমাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার করে টাকা নিয়ে আমাদের ১০জনকে এক সাথে ছেড়ে দেয়। তারা ট্রলারে করে এসে আমাদেরকে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকায় জঙ্গল থেকে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায়। পরে আমরা বাড়ি চলে আসি।

প্রসঙ্গতঃ গত ২৭ জানুয়ারি দুবলার চর এলাকার বাহির সমুদ্র থেকে ১৫ জেলেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে ডাকাতারা। ভোর ৬টার দকে সুন্দরবনের ডাকাত দয়াল বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরের নিরীহ জেলেদের উপর আক্রমণ করে। এসময় দুঃসাহসী জেলেরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদেরকে প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একই সাথে দুবলার চরের কোস্টগার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে। ডাকাতদের সাথে জেলেদের হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা তিন ডাকাতকে জাল দিয়ে ধরে ফেলে। কিন্তু এসময় ডাকাতরা সেখানে থাকা বিভিন্ন নৌকা থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। অপহরনের ১৭দিন পর মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে সাতক্ষীরার ১০ জেলেকে চোখ বেধে ১২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকায় জঙ্গল থেকে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় ডাকাতরা। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাত ৩টার দিকে তারা বাড়িতে পৌছায়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!