গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পরপরই সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা গ্রামে আনন্দ মিছিলে গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় থানায় ও আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
একই বিষয়ের উপর দুটি মামলা হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আমলী আদালত-৮ এ দায়েরকৃত মামলাটর কার্যক্রম গত বৃহষ্পতিবার স্থগিত করেছেন বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন।
মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপরপরই সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগের ছাত্র-জনতা আন্দোলন মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিকাল ৫টার দিকে প্রতাপনগর ইউপি’র চেয়ারম্যান জাকীর হোসেনের বাড়ির সামনে ইটের সোলিং এর রাস্তার উপর পৌঁছায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে জাকিরসহ তার সঙ্গীরা লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে বাড়ির দোতলায় উঠে যান। একপর্যায়ে তার ছোঁড়া গুলিতে হিজলিয়া গ্রামের রহিম সরদারের ছেলে আলম সরদার, কুড়িকহিনিয়া গ্রামের আব্দুল আরেজের ছেলে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ ও কল্যানপুর গ্রামের নূর হাকিম ঘরামীর ছেলে আবুল বাশার আদম মারা যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হন কমপক্ষে ১০ জন। জাকিরের বাড়িতে থাকা লোকজনদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
এ সময় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারিরা বাড়িতে ঢুকে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, জাকিরের ভাই অজিহার রহমানের ছেলে আবিদ হোসেন, নাকনা ( লস্করী খাজরা) গ্রামের সুজায়েত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুর রহমানের ছেলে শেখ আসিফ রেজা, সিরাজুল ইসলামের ছেলে শেখ শাহীন হোসেন ও সাজু হোসেনের ছেলে শেখ শাকেভ হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ দোতলা থেকে নীচে ফেলে দেয়। জাকিরের ভাই আসাদুর রহমানের বাড়িঘর ভাঙচুর করে ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। থানায় পুলিশ না থাকায় নয়টি লাশই পরদিন ময়না তদন্ত ছাড়াই নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করানো হয়।
জাকির হোসেনসহ ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে তার ভাই অজিয়ার রহমান বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ১০০০/১৫০০ জন লোকের বিরুদ্ধে গত ২২ আগষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা (৭নং) দায়ের করেন। আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।
এদিকে জাকির হোসেনের গুলিতে হিজলিয়া গ্রামের আলম সরদার, কুড়িকহিনিয়া গ্রামের হাফেজ আনাজ বিল্লাহ ও কল্যানপুর গ্রামের আবুল বাশার আদম মারা যাওয়ার ঘটনায় হিজলিয়া গ্রামের মোহর আলী সরদারের ছেলে ও নিহত আলম সরদারের বাবা আব্দুর রহিম সরদার বাদি হয়ে গত ১৫ আগষ্ট ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা (৩নং) দায়ের করেন। মামলায় তদন্তভার দেওয়া হয় আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলামকে।
এদিকে হিজলিয়া গ্রামের মিনহাজউদ্দিনের ছেলে রহিম আলী সরদারের থানায় মামলা দায়ের করার ঘটনা গোপন রেখে জাকির চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত কল্যানপুর গ্রামের আবুল বাশার আদমের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বহুল আলোচিত আব্দুল মজিদ বাদি হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার আমলী-৮ আদালতে উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমসহ ৩০জনের নাম উল্লেখ করে (সিআর -৩৩০/২৪ আশা) মামলা দায়ের করেন।
বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন মামলাটি এফ আই আর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবসা গ্রহণের জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেব নির্দেশ দেন। ওই দিনই আদেশ পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একই বিষয়ের উপর থানায় ৩নং হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সিআর-৩৩০/২৪ মামলার নথি ও আদেশ গত ৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ঠ আমলী আদালত-৮ এ পাঠিয়ে দেন।
গত ৫ আগষ্ট বিচারক সালাহউদ্দিন একই বিষয়ের উপর দুটি মামলার বিষয়টি পর্যালোচনা করে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর ১৮৯৪ এর ২০৫(ডি) ধারামতে সিআর-৩৩০/২৪ নং মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। একইসাথে থানার মামলা-৩ ও
জিআর-১৭৪/২৪ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য আগামি ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
আশাশুনির কল্যানপুরের আব্দুল মজিদের পক্ষের আইনজীবী সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. মামুন সিআর-৩৩০/২৪ মামলার কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা গেজেট/কেডি