আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাতক্ষীরার সাবেক দুই প্রভাবশালী পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত চারটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিগত ২০১৩-১৪ সালে সংঘটিত ঘটনায় দায়ের করা ওই সব হত্যা মামলায় দুই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সহ সাবেক মন্ত্রী আ. ফ. ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মোঃ নজরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক সরকারি কৌশলী (জিপি), স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত সাতক্ষীরার বিভিন্ন আদালতে সাবেক দুই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা মামলা দায়েরের খবর পাওয়া গেছে।
আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর আমলি আদালতে কালীগঞ্জের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রথম হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। বাদীর পুত্র সাতক্ষীরা শহর ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি আমিনুর রহমানকে বিগত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল শহরের কামালনগরের একটি মেসে গুলি করে হত্যা এবং আরও ৭জনকে গুলি করে জখম করার অভিযোগে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটিতে সাবেক এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর এবং তৎকালীন এএসপি সদর সার্কেল, যিনি পরবর্তীতে সাতক্ষীরায় পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামানসহ ২৮জনকে আসামি করা হয়।
দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় গত ২১ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর আমলি আদালতে। সদরের কাশেমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান সানার ছেলে জিয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলাটিতেও সাতক্ষীরার সাবেক দুই পুলিশ সুপার এবং জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, সাবেক সরকারি কৌশলী, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক, আওয়ামী লীগ নেতাসহ মোট আসামি করা হয় ১৮জনকে।
২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাদী জিয়ারুল ইসলামের আপন ভাই সদরের আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনারুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে থানায় নিয়ে পিটিয়ে দুই হাত, দুই পা ভেঙে দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে গভীর রাতে চোখ বেঁধে সদরের শিকড়ী বিলের ফাঁকা মাঠে বুকে, ঘাড়ে ও মাথায় গুলি করে হত্যার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
তৃতীয় এবং চতুর্থ মামলা দুটি দায়ের করা হয় গত ২২ আগস্ট। তৃতীয় মামলাটি দেবাহাটা আমলি আদালতে দায়ের করেন বাদী কালীগঞ্জের নাংলা গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে রবিউল ইসলাম। বাদীর ভাই জামায়াত নেতা আনারুল ইসলামকে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক দুই পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও কাজী মনিরুজ্জামানসহ মোট ৫৪জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হককেও আসামি করা হয়েছে।
চতুর্থ মামলাটি সাতক্ষীরা সদরের আমলী আদালতে একইদিন দায়ের করেন সদরের পদ্মাশাখরা গ্রামের মৃত এজাহার আলীর ছেলে জামায়াত সমর্থক শহর আলী গাজী।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বাদীর নাবালক পুত্র মাদ্রাসার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া আবু হানিফ ছোটন(১৫)কে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তিনটি গুলি করে হত্যা করার অভিযোগে তিনি ওই মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলাটিতেও সাতক্ষীরার সাবেক দুই পুলিশ সুপারসহ মোট আসামি করা হয়েছে ২৬ জনকে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত জুলাই-আগস্ট এর ঘটনায় আলোচিত কোন মামলা আদালতে দায়ের করা না হলেও বিগত ১৩-১৪ সালের ঘটনায় ওইসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং সকল মামলা এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিচ্ছেন আদালত।
তবে ইতিমধ্যে আদালতে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলায় বেশ কয়েকজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। যারা আদৌ ঘটনার বিষয় অবহিত নন বলে জানা গেছে। ওইসব আসামী শ্রেণীভুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা আরো জানান, কেবলমাত্র পূর্ব শত্রুতার কারণে ওইসব মামলায় তাদেরকে হয়রানি করার জন্য উদ্দেশ্য মূলকভাবে আসামি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, এসব মামলার সঠিক তদন্ত হলে ন্যায় বিচার পাবেন তারা।
খুলনা গেজেট/এনএম