খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

টানা বর্ষণে বিপাকে বাগেরহাটের বোরো চাষিরা, আমনেও শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা (পাতো খোলা)। মাঠঘাট ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি রয়েছে পানির নিচে। যার ফলে চারা দেওয়া ক্ষেতের ধান ভেসে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া চারা দেওয়ার জন্য বীজ ধান প্রস্তুত থাকলেও, পানি ও বৃষ্টির কারণে বীজতলায় বুনতে পারছেন না কৃষকরা। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ভারী বর্ষণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ধানের চারা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন চাষীরা। যার প্রভাব পড়বে বোরো উৎপাদনে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বাগেরহাটে ৬৫ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বোরো রোপন করবেন কৃষকরা। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন এর মত। বাগেরহাটে মূলত নভেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বোরো মৌসুম চলে। বোরো রোপনের জন্য চাষীরা নভেম্বরের শুরু থেকে চারা তৈরির জন্য ক্ষেতে বীজ ধান বোনা শুরু করেন। খোজ নিয়ে জানাযায়, বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া, ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ  জমিতে চাষীরা বীজ ধান ফেলেছেন। জমিতে ফেলা বীজ ধান বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে। বীজ ধান ফেলার জন্য প্রস্তুত করা জমির উপর এক থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানি রয়েছে। এই বৃষ্টি যদি স্থায়ী হয় তাহলে অনেক বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক শেখ রুস্তম আলী বলেন, ১৮ কেজি বীজ ধান প্রস্তুত করেছিলাম চারা দেওয়ার জন্য। যে জমিতে বীজ বুনবো সেখানে এখন প্রায় ২ ফুট পানি। শনিবারের মধ্যে পানি না কমলে, আমার ৬ হাজার টাকার ধান একদম পানিতে ফেলে দেওয়া লাগবে।

পাশ্ববর্তী গ্রাম পদ্মনগরের শহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার বীজ ফেলেছিলাম, চারা কেবল সামান্য বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু এখনতো চারার উপরে দেড় ফুট পানি কি হবে জানি না।

শুধু রুস্তম-শহিদুল নয়, কয়েক হাজার চাষীর অবস্থা একই রকম। তবে বৃষ্টিতে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে বেশকিছু এলাকায় ঝড়ে পেপে ও কলা গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি স্থায়ী হলে সবজি চাষীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

অন্যদিকে আমন চাষীরাও শঙ্কায় রয়েছেন। বেশকিছু এলাকায় আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে আমন ধান। ঝড় ও বৃষ্টির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পেলে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী আমন চাষী রেজাউল গাজী বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে ধান একদম নুয়ে পড়ে মাটির সাথে মিছে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে ধান। কি হবে জানি না।

আমন চাষী হারুণ শেখ বলেন, কয়েকদিন হয়েছে ধান ফুলে বের হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান দাড়ানো রয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি বেশি হয়, তাহলে ধান ঘরে তোলা যাবে না।

মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের কৃষক প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঝড়ে আমার ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একশ‘র বেশি পেপে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পেপে ছিল। এছাড়া সাম্মাম গাছেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এখনও সময় রয়েছে, কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। তবে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে কোন প্রভাব পড়বে না। ঝড়ো বাতাস বৃদ্ধি পেলে আমন ধানের কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!