সড়কের দুইধারে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা মরা রেইনট্রি গাছের কারণে সাতক্ষীরার ৯টি সড়কে চলাচল মারাত্মক ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। যে কোন মূহুর্ত্বে এসব মরা গাছ সড়কের উপর ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। জেলা পরিষদের মালিকানধীন হওয়ায় গাছ গুলো সরাতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার জাননোর পরও সড়কের দুই ধার থেকে মরা গাছ গুলো সরিয়ে নেওয়ার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন ওইসব সড়কে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
সরেজমনে সাতক্ষীরা-আশাশুনি, সাতক্ষীরা- কালিগঞ্জ সহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার ৯টি প্রধান সড়কের পাশে রয়েছে সারি সারি রেইনট্রি গাছ। গাছগুলো শুকিয়ে গেছে অনেক আগে। শুকনো গাছের ডাল ও কাঠ ভেঙে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সামান্য বাতাস কিংবা ঝড়ে মরা গাছের ডাল ভেঙে সড়কে পড়ায় আহত হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় মানুষজন। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে পথচারী ও যানবাহন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার জানানোর পরেও শুকনা গাছগুলো কেটে নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলচল করতে হচ্ছে তাদের। শুকনো গাছগুলো সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ওই সড়ক গুলো এখন সৃষ্টি হয়েছে মরণ ফাঁদে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় জনগণ সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে রেইন্ট্রি গাছ রোপণ করেন। দুই বছর আগে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দুই ধারে থাকা রেইন্ট্রি গাছগুলো শুকিয়ে মরে যায়। শুকিয়ে যাওয়া এসব গাছগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের দুই পাশে ৩০৭, কদমতলা-বৈকারি সড়কের দুই পাশে ২২৭, কুল্যা-রামনগর সড়কের দুই পাশে ২০০, পাটকেলঘাটা-দোলুয়া সড়কের দুই পাশে ১৪৭, ঝাউডাঙ্গা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে ২৭, নজিমগঞ্জ-নূরনগর সড়কের দুই পাশে ৪৫০, শ্যামনগর-কাশিমাড়ি সড়কের দুই পাশে ২৫০, শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি সড়কের দুই পাশে ২০০, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই পাশের ২৭০টি গাছ শুকিয়ে মরে গেছে।
আশাশুনির বিছট গ্রামের অটো চালক আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে শহরে যাতায়াত করতে হয়। বেশিরভাগ সময় চাঁদপুর ভায়া ফিংড়ি হয়ে আমরা গাড়ি নিয়ে সাতক্ষীরা শহরে ঢুকি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে দিনে কমপক্ষে দুইবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয় আমার মত আরো অনেককে। কিন্তু সড়কে দুই ধারের গাছ শুকিয়ে মরে যাওয়ায় সব সময় মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। কখন না জানি গাছের ডাল ভেঙে গাড়ির উপর পড়ে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়কের চলচলকারি একাধিক ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক জানান, রাস্তার দুই পাশের গাছের যে অবস্থা তাতে মনে সব সময় আতঙ্ক কাজ করে। যেকোনো সময় উপর থেকে শুকনো ডাল পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুকনো গাছগুলো তুলে ফেলে নতুন গাছ রোপণ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ধুলিহর সড়কের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানান, তার বসতবাড়ির উপর দিয়ে রাস্তার দুই পাশে গাছের শুকনো ডাল রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। কখনো শুকনো গাছ বা ডাল ভেঙে পড়লে তার গোয়ালে থাকা প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাড়িতে থাকা ছোট ছোট শিশুরাও।
ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের প্রভাষক মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন মটরসাইকেলে শহরের বাসা থেকে কলেজে যাতায়াত করি। যাওয়া আসার পথে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন মরা গাছের ডাল ভেঙে মাথার উপর পড়ে। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের দুই পাশে কয়েক’শ মরা গাছ দাড়িয়ে রয়েছে। প্রায়শঃ গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেকারণে রাস্তায় চলার সময় নিজেও সব সময় আতংকের মধ্যে থাকি। তিনি দ্রুত সড়কের দুই ধারের মরা গাছ গুলো সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
ধুলিহর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু জানান, সড়কের দুই পাশের মরা গাছ গুলোর মালিক জেলা পরিষদ ও বনবিভাগ। মামলার ভয়ে কেউ ওই গাছে হাত দিতে সাহস পায়না। অনেক আগেই আমরা জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তাকে মরা গাছগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তিনি কোন গুরুত্ব দেননি। সড়কের দুই পাশের মরা গাছগুলো এখন সড়কে চলাচলকারি যানবাহন ও পথচারীদের জন্য মারাত্মক ঝুকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যে কোন সময় গাছ বা ডাল ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘনা ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, এই সড়কের ধারে অনেকের ঘরবাড়ির চালের উপরও মরা গাছের ডাল রয়েছে। ঝড়ে বা যে কোন কারণে ডাল ভেঙে ঘরের চালের উপর পড়লে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দ্রুত সড়কের দুই ধারের মরা গাছ গুলো সরিয়ে নিতে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।
সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক অমিতা মন্ডল বলেন, বন বিভাগের আওতাধীন শুকনো গাছগুলো সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুত সেগুলো কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলার ৯টি সড়কের দুই পাশে থাকা অধিকাংশ রেইন্ট্রি গাছ শুকিয়ে মারা গেছে। বেশ কিছুদিন আগেই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কিছিু কিছু স্থানে এই মার গাছের কারণে সড়কে যানবাহন বা পথচারীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কের ধারের গাছ গুলো সরকারের সম্পদ হওয়ায় এগুলো সারিয়ে নিতে একটি প্রক্রয়া মেইনটেইন করতে হয়।
তিনি বলেন, দরপত্র বা টেন্ডারের মাধ্যমে এই গুলো সরিয়ে ফেলা হবে। ইতিমধ্যে বন বিভাগের মাধ্যমে জরিপ করে গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে শুকনো গাছগুলো দ্রুত সড়কের দুই পাশ থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ এএজে