রাজধানীতে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনে ৬৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় ৬৪টি মামলা হয়েছে। আর আগুন দেওয়ার সময় আশপাশের লোকজন এবং পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২৯ অক্টোবর থেকে তিন দফা অবরোধ ও একদিন হরতাল হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা দেখেছি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুষ্কৃতিকারীরা ঢাকা মহানগর এলাকায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে বাসে আগুন দিয়েছে। এতে দ্রুত বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গত ৩১ অক্টোবর রাতে একজন হেলপারকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজধানীর ১২টি স্থানে আগুন দেওয়ার সময় ১২ জন দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বাকি আরও কয়েকজন আছে। তাদের বিষয়ে যাচাইবাছাই চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কেউ যদি নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে তাহলে ডিএমপি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। আমরা দেখেছি যে, দুষ্কৃতিকারীদের বিভিন্ন জায়গা থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নির্বিচারে এসব নাশকতা করে। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি আগামী ১২ ও ১৩ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাইকে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাব, কেউ যেন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম না করে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার প্রত্যেকই অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এমন দেখা গেছে যে, একজন আরেকজনকে নিয়োগ করেছে, আবার আরেকজন অন্যজনকে নিয়োগ করেছে। তারা বিভিন্নভাবে অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে মানুষকে ভীত করার জন্য এবং মানুষ যেন ভয়ে রাস্তায় না নামতে পারে সেই লক্ষ্যে অবরোধের আগের দিন ও অবরোধের দিন নাশকতা করেছে।’
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে কোনো অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থ লেনদেনের দু-একটি তথ্য আমরা পেয়েছি। ছদ্মবেশে কেউ নাশকতা করলে জনগণকে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন। প্রতিদিন যে কয়েকটি ঘটনা ঘটছে, তারচেয়ে অনেকগুণ ঘটনার পরিকল্পনা প্রতিহত করা হয়েছে। নইলে নাশকতার সংখ্যা আরও বাড়ত।’
নাশকতাকারীদের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘অবশ্যই, তাদের অনেক ক্ষেত্রে প্রলোভন দেওয়া হয়েছে যে, তোমার জায়গা যদি সুদৃঢ় রাখতে চাও তাহলে এই কাজটি করে দাও। এই ধরনের অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে। যারা অবরোধের ডাক দিয়েছে তারা ওইসব দলের বিভিন্ন পর্যায়ের লোক। তাদের চিহ্নিত করতে এবং নাশকতাকারীদের পেছনে কারা আছে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’
ডিএমপি জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে কেউ যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে বা বাইরে থেকে অগ্নিসংযোগ করেছে। তাদের কাছ থেকে পেট্রোল, গান পাউডার, দেশলাই, তুলা, পুরানো কাপড় ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে। আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মোহাম্মদপুরে একজন দুষ্কৃতিকারী মারা যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম