আর দশটি সাধারণ মানুষের মতো চলাচল কবার অবস্থা নেই। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে কষ্টের শেষ নেই। তারপরও থেমে থাকেননি আজগর আলী গাজী (৩৪)। আজগর আলী অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ধোপাদী গ্রামের বাসিন্দা। যুবক বয়সে অসাবধানতার খেসারত দিচ্ছেন তিনি। হারিয়েছেন দুটি পা। আর এখন অন্যের উপর নির্ভরশীল না থেকে তিনি হাত পাখার ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আজগর আলী জানান, বছর কুড়ি আগে বাড়ির পাশে থাকা গাছে উঠে জাম পাড়ছিলেন। হঠাৎ অসাবধানতাবশত গাছ থেকে নিচেই পড়ে যান। এতে কোমরে মারাত্মক আঘাত পান। দুপায়ের শক্তি হারান। ওই সময় অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। তার দুই পায়ে পচন ধরে। তিনি আর চলতে পারেন না সেই থেকে।পরে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন তিনি কিন্তু তার পা আর ভালো হয়নি। পায়ে জোর না পেয়ে তাঁর চিন্তা বাড়তে থাকে। ধার-কর্জ করে একটি হুইলচেয়ার কিনে চলতে থাকেন। কিন্তু সংসারের চাকাতো চলে না।এমতাবস্থায় তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতায় ব্যবসা করার পরিকল্পনা শুরু করেন হুইলচেয়ারে বসে হাত-পাখার ব্যবসার। সেই থেকে তিন বছর ধরে একাধারে হাত পাখা বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্থানীয় নওয়াপাড়া বাজার, ফুলতলা বাজার, বসু্ন্দিয়া বাজারসহ আশ-পাশের বাজারগুলোতে হুইলচেয়ারে বসে হাত পাখা বিক্রি করে কোন রকমে তার সংসার চলছে।
সকালে বাড়ি থেকে বের হন তিনি পাখা বিক্রির উদ্দেশ্য। দু-পা প্যারালাইসিস আজগার নিজে কোন ক্রেতাকে পাখা নিতে না বললেও অনেকেই তাকে দেখে এগিয়ে এসে তার কাছ থেকে হাত পাখা কিনে নিয়ে যান।ক্রেতারাতাকে সহযোগিতা করেই চলেছেন নিজেদের সাধ্যমতো দাম পরিশোধ করেন। আবার তারা নিজের ক্রয়করা হাত পাখা নিজেদেরাই তুলে নেন।
আজগর গাজী বলেন, আমি সকালে বাড়ি থেকে ৭০/৮০পিচ হাত পাখা নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাহির হই। দুপুরগড়িয়ে বিকেল হয়ে যা বেচাকেনার শেষ করতে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে সংসার টা কষ্টে চলে যায়।এ ভাবে প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলছেন নিজের নিয়তির সাথে।
আত্ননীর্ভরশীল এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি দাবি করে বলেন, আমাকে একটি দোকান করে দিলে সেখানে মালামাল তুলে ব্যবসা করতাম।আর আমার হুইলচেয়ারে হাত পাখার পাশাপাশি বাদাম,চিপ্চ ভাজার ব্যবস্থা করতে পারলে বেচতে পারতাম।
আজগর আলীর পরিবারে দু সন্তান, স্ত্রী,ও মা আছে। শত কষ্টে, রোদ,বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে, কয়েকবার চলার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ও কোন কারণেই তিনি দমে পড়েনি। তবে বর্তমান সময়ে সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে তার। এ জন্য তিনি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ কৃত্রিম পায়ের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
খুলনা গেজেট/কেডি