ভেঙে ফেলার প্রায় ৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও এখনও সাতক্ষীরা নিউ মার্কেটের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীর ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পুঁজির টাকা খরচা করে সংসার নির্বাহ করতে গিয়ে এসব ব্যবসায়ীদের অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট ভেঙে ফেলার পর কিছু কিছু ব্যবসায়ী বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারলেও অনেক ব্যবসায়ী কোন ঘর না পেয়ে ব্যবসা করতে পারছেন না। অনেকে ঘর না পেয়ে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে কোন রকমে টিকে আছেন। আবার অনেকে এখনো আশায় দিন কাটাচ্ছেন নতুন ভবন পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি অর্থ জোগাড় করতে না পারায় নতুন নিউ মার্কেট ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নিউ মার্কেটের তনুজা কম্পিউটারের স্বত্তাধিকারী রাজু আহমেদ জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দিকে বহুতল নতুন ভবন নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাসে পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত নিউ মার্কেটটি ভেঙে ফেলে। সে সময় ব্যবসায়ীদের বলা হয় ব্যবহারের অনুপযোগি নিউ মার্কেট ভবনটি ভেঙে ১২তলা নতুন নিউ মার্কেট ভবন নির্মান করা হবে। সেমসয় ব্যবসায়ীদের বলা হয় যারা এখানে ব্যবসা করছেন তাদেরকে নতুন ভবনে দোকান ঘরের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কিন্তু এই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীদের তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বুলডোজার দিয়ে নিউ মার্কেটটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর প্রায় ৫ বছর পার হতে চললেও নতুন নিউ র্মাকেট ভবন নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সাতক্ষীরা পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে নিউ মার্কেটের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে আজ পথে পথে বেড়াচ্ছে। অনেকে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একই কথা বলেন, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ছি জুয়েলার্সের স্বত্তাধিকারী আব্দুল হামিদ, নিপুন গার্মেন্টস্ এর পরিচালক মোঃ শওকাত হোসেন ও আল বারাকার জুয়েলার্সের পরিচালক কামরুজ্জামান। তারা সকলেই ৮০ দশকের দিকে পৌরসভা থেকে। নিউ মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নেয়। দীর্ঘদিনের এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়ে তাদের অপুরনীয় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে বলে জানান তারা। তাদের সকলকেই বলা হয়েছিলো ভেঙে ফেলার পর পরই বহুতল নতুন ভবন নির্মাণ করে সেখান আপনাদের মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান ঘর বরাদ্ধ দেয়া হবে। কিন্তু বিগত ৫ বছরের মধ্যে তার কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ করেন এসব ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরা পৌর কর্তৃপক্ষ একটি অমানবিক কাজ করেছেন। নিউ মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে যে সকল ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো তাদের রীতিমত অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় নিউ মার্কেটটি। কিন্তু খুবই দুঃখজনক যে, আজও পর্যন্ত নতুন কোনো ভবন সেখানে গড়ে তোলা হয়নি। বা নতুন কোন ভবন নির্মাণের নুন্যতম কোন উদ্যোগ নেয়নি পৌরকর্তৃপক্ষ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে এসব ব্যবসায়ীরা এখন পথে পথে ঘুরছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মান করে এসব ব্যবসায়ীদের সেখান পুনঃবহাল করার দাবি জানান তিনি।
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ শুধুই আশ্বাস ছাড়া এ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে জীবিকা অর্জন করে আসছিলো। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামত ঐতিয্যবাহী নিউ মার্কেটটি ভেঙ্গে ফেলে আজ ব্যবসায়ীদের পথে নামিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, একরকম জোর করে ব্যবসায়ীদরেকে মার্কেট থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। সেসময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অসংখ্যবার পৌর মেয়রের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এখন ব্যবসায়ীরা তাদের পরিবার নিয়ে দারুন কষ্টে দিন পার করছেন। তিনি দ্রুত নতুন নিউ মার্কেট ভবন নির্মাণের দাবি জানান।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজি ফিরোজ হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সাতক্ষীরা বহুতল নিউ মার্কেট ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী সবিচ (সিইও) এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন জানান, ভেঙ্গে ফেলা নিউ মাকের্ট নতুন করে স্থাপন করার মতো অর্থ সাতক্ষীরা পৌরভার নেই। বহুতল ভবনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় প্রস্তাব পাঠালে সেটি বাতিল করা হয়। ফলে নতুন করে নিউ মার্কেট ভবন তৈরী অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদে অচলাবস্থা ছিলো বেশ কিছুদিন। যা নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিলো। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বিবেচনা করে চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে তারা জায়গা বরাদ্দ নিয়ে নিজ খরচে স্থাপনা তৈরী করতে পারে।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি জানান, নিউ মাকের্টের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েক দফা চেষ্টা করা হয়েছিলো ১২তলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট করা জন্য। কিন্ত এই মূহুর্ত্বে তা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ নিউ মার্কেটের জন্য একটি ৭তলা ভবনের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মার্কেট করতে পারলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকন বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেটে/এসজেড