চলতি মৌসুমে আম উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিগত বছরের রেকর্ড ভেঙেছে সাতক্ষীরা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদনের পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় এবার ১৩২ মেট্রিক টন আম বেশি রপ্তানি হয়েছে বিদেশে। তবে গতবারের তুলনায় এবার বাগান মালিকরা দাম পেয়েছে অনেক কম।
সূত্র মতে, ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ জেলায় চলতি মৌসুমে আম উৎপাদন হয়েছে ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। যেখানে গত মৌসুমে সাতক্ষীরায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৫১ হাজার মেট্রিক টন। একইভাবে ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানি শুরু হওয়ার পর চলতি মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয়েছে। যার পরিমান ১৫৩ টন। বিগত বছরেও এ পরিমান ছিল মাত্র ২১ টন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আবহাওয়া জলবায়ু ও ভৌগোলিক কারণে সাতক্ষীরার আম দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় কয়েক সপ্তাহ আগে পাকে। এছাড়া সাতক্ষীরার হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া ও আম্রাপালি আম স্বাদে গুণে মানে অনন্য। এই বিশেষত্ব কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরার আম বৈদেশিক বাজারে রপ্তানি শুরু হয়।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা থেকে ২০১৫ সালে ২১ টন, ২০১৬ সালে ২৩ টন, ২০১৭ সালে ৩২ টন, ২০১৮ সালে ১৯ দশমিক ৫ টন, ২০১৯ সালে ১ টন, ২০২১ সালে ১১ দশমিক ৩৬ টন ও ২০২২ সালে ২১ টন আম রপ্তানি হয়। যা চলতি মৌসুমে ১৫৩ টনে উন্নীত হয়েছে। এসব আমের অধিকাংশই রপ্তানি হয়েছে ইতালি, ফ্যান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় এবার আমের যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে, তেমনি রপ্তানিও হয়েছে এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, প্রথমে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা নিরসন করে সফলভাবে আম রপ্তানি করা গেছে। যদিও এবছর আরও বেশি আম রপ্তানি করা যেত। কিন্তু অন্যান্য জেলার আম বাজারে চলে আসলে ফ্লো কিছুটা কমে যায়।
তবে, আমের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে এখনো হতাশা কাটেনি আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। গত মৌসুমেও সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আকার ভেদে ২২শ থেকে ২৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে এসব আম ১৪শ থেকে সর্বোচ্চ ১৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমের ফলন বেশি হওয়ায় দামও কম পেয়েছে বলে জানান ব্যবসায়িরা।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার আম বাগান মালিক বিপ্লব ভট্টাচার্য জানান, এবছর সব বাগানে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরও বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। কারণ এবার আমের দাম পাওয়া যায়নি। দুই বিঘা জমির আম পাড়তে যে লেবার লাগে অনেক ক্ষেত্রে তা তোলাই কঠিন হয়ে যায়।
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর এলাকার আম চাষী মোকলেছুর রহামন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর তার ৬টি বাগানে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছিল। এবার মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ফলন ভাল হওয়ায় মনে করেছিলাম গত বছরের লোকসানটা পুষিয়ে যাবে। কিন্তু অকৃতিতে অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এবং আমের আশানারুপ দাম না পাওয়ায় এবারও তার লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে ভোক্তারা লাভবান হলেও খুব একাট সুবিধা করতে পারেনি ব্যবসায়ি ও আম চাষীরা।
খুলনা গেজেট/এসজেড