ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যের বালাসোরে তিন ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কয়েকজন বাংলাদেশিও আহত হয়েছেন। কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশন এই দুর্ঘটনায় কয়েকজন বাংলাদেশির আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে।
হাই কমিশনের এক কূটনীতিক বলেছেন, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশন বালাসোরে ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজন বাংলাদেশি যাত্রীর আহত হওয়ার খবর পেয়েছে। তারা সামান্য আহত হয়েছেন। তবে ঠিক কতজন বংলাদেশি এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হাই কমিশনের একটি দল বালাসোরের দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও এর আগে শনিবার সকালের দিকে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো বাংলাদেশির হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রায়ই চেন্নাই, ভেলোর এবং দক্ষিণ ভারতে যান। তারা সেখানে যাওয়ার জন্য ভরসা করেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের ওপরে। শুক্রবার ওই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়াগামী হাওড়া বেঙ্গালুরু যশবন্তপুর এক্সপ্রেসও। ওই ট্রেনেও চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন অনেকেই। দুর্ঘটনার কারণে ট্রেন চলাচল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে কিছু বাংলাদেশিও বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
পশ্চিমবঙ্গের এই দৈনিক বলছে, কিডনির চিকিৎসার জন্য ভারতে এসে কলকাতা থেকে তামিলনাড়ুর ভেলোরগামী ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জ্যোৎস্না বেগম। কিন্তু ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা এবং তার জেরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারতগামী প্রায় সব ট্রেনের চলাচল স্থগিত করায় বিপদে পড়েছেন তিনি ও তার ছেলে।
হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে কিডনির সমস্যায় ভোগা বাংলাদেশের এই নারী বলেন, ‘চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ইন্ডিয়াতে চেনাশোনা কেউ নেই। এখন শুনছি ভেলোর যাওয়ার ট্রেন বাতিল হয়েছে। আমি নিজে অসুস্থ, হাতে টাকাপয়সাও খুব বেশি নেই। খুবই বিপদে পড়ে গেলাম। কী করব বুঝতে পারছি না।’ তার মতো আরও অনেক বাংলাদেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের পক্ষ জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিতে কয়েকজন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। কারণ চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি যাত্রীরা করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। সেই কারণেই একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের অফিস।
দুর্ঘটনা বিষয়ক তথ্য জানতে বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩) নম্বর দিয়েছে তারা। এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করেও তথ্য জানতে পারবেন বাংলাদেশের বাসিন্দারা।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বালেশ্বর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, একটি মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে ট্রেনটির। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে পাশের লাইন দিয়ে আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলোর উপর এসে পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া ডাউন ট্রেনটি। সঙ্গে সঙ্গে হাওড়াগামী সেই ট্রেনটির দু’টি কামরাও লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে নিহত এবং আহতের সংখ্যা।
এই দুর্ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টার পর শনিবার বিকেলের দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, বালাসোর দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও এর আগে ভারতের স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৮০ জনের বেশি বলে জানানো হয়েছিল। দুর্ঘটনায় ৬৫০ জনেরও বেশি যাত্রী আহত হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম