খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি আজ রোববার (১৪ মে) দুপুর ৯ টার পর থেকে বেলা ৩টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উত্তর মায়নমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙন আতংকে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেই সাথে শ্যামনগর, আশাশুনিসহ ভাঙন কবলিত দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের গাবুরায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তবে শনিবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা শহরে কিছুটা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও কিছুক্ষণ পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া এবং চুনা নদীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ভাঙন আতংকে রয়েছেন উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার মানুষ রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আতংকে। অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ। এছাড়া নেবুবুনিয়াসহ অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ তৈরিই হয়নি বহুদিন। সুতরাং বড় ধরনের কোন দূর্যোগ এলে তলিয়ে যাবে গ্রামটি। ‘দৃষ্টিনন্দন’ মিঠা পানি প্রকল্পের পাশে খুবই নিচু একটি বেড়িবাঁধ রয়েছে। সেখানে বেশ কিছুদিন যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ৫ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে ভাঙন রোধ করার জন্য। এলাকাটি তলিয়ে গেলে দৃষ্টিনন্দন পানির প্রকল্পটিতে লবনাক্ত পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করবে।

আশাশুনির বিছট গ্রামের শাহিনুর রহমান জানান, শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেযেছে। রোববার দুপুরে জোয়ারে তা আরো বাড়তে পারে।

প্রতাপনগর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে কপোতাক্ষ নদের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ দুপুরে তা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনিতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ বেড়িবাঁধ খুবই ঝুকিপূর্ণ। এতে করে নদ-নদীর পানি বেশি বাড়লে এসব বাঁধ ভেঙে অথবা উপচে লোকালয়ে লোনা পানি ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমি নিজে লোকজন নিয়ে সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। বেড়িবাঁধে কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে আমরা সেখানে কাজ করবো।

শনিবার (১৩ মে) বিকালে ভাঙন কবলিত গাবুরা ইউনিয়ন পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, ভাঙন রোধের জন্য ২০ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া গাবুরায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। জেলেখালী এলাকা থেকে শুরু হয়েছে এই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম। ২০২৪ সালের জুন মাস নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, রোববার দুপুর ১২টার পর থেকে বেলা ৩টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উত্তর মায়নমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সাতক্ষীরা উপকুলে বর্তমানে ৪ সতর্ক সংকেত চলছে। তবে, ঘূণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরায় আজ সন্ধ্যা থেকে আগামী ২/১ দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্নসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোখার প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত জানান, আসন্ন ঘূর্নিঝড় ‘মোখা’কে সামনে রেখে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে মোট ৮৮৭টি সাইক্লোন সেন্টার কাম আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এতে ৪ লক্ষ মানুষের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও ৫ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সচেতন করার লক্ষে ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা সাতক্ষীরার উপকূলে আঘাত হানার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে সম্ভাব্য যে কোন ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক টীমসহ সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কাজ করছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!