মুড়ির চাহিদা সারা বছর থাকলেও বিশেষ করে রোজার সময়ে হাতে ভাজা মুড়ির উৎপাদন ও চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। এসময়ে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের উত্তর গাভা গ্রামের ৭০টি পরিবার। এ গ্রামের মানুষের আয়ের উৎস প্রধান মুড়ি উৎপাদন। এ কারণে গ্রামটি মড়ি গ্রাম নামেও পরিচিতি লাভ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর গাভা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজার কাজ। চলতে থাকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। মুড়ি ভাজার কাজে নারীদের সহযোগিতা করেন বাড়ির পুরুষেরা। প্রথমে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে মাটির পারে বালি গরম করা হয়। মুড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত চাউলের সাথে লবণ পানির মিশ্রণ ঘটিয়ে গরম করে বালির পাত্রে ঢেলে নাড়াচাড়া করলেই কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে তৈরি হয়ে যায় মুড়ি। হাতে ভাজা মুড়িতে কোন ধরনের সার ব্যবহার করা হয় না। যে কারনে অন্য মুড়ির চেয়ে এই মুড়ি খেতে বেশি স্বাদ লাগে।
এ সব মুড়ি প্যাকেট করে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার, আশাশুনি, বডদল, পাইথলি, বদরতলা, পরুলিয়া, নলতা,কালিগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকার পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে যায় পুরুষরা। স্বাদে অনন্য হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে হাতে ভাজা মুড়ির কদর।
উত্তর গাভা গ্রামের রঘুনাথ দাশ বলেন, এটা আমাদের বাপ দাদার পেশা। ছোট বেলা থেকেই আমরা এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। এই পেশার উপরে নির্ভর করে আমাদের পরিবার চলে। রোজার মাসে দৈনিক ৫০-৬০ কেজি চাউলের মুড়ি ভেজে বিক্রি করি। অন্য সময়ে এর পরিমান অর্ধেকে নেমে আসে। তবে চাউলের দাম বেশি হওয়াতে বর্তমানে লাভ কম হচ্ছে। পূর্বে এক বস্তা মুড়িতে ৫০০-৬০০শ’ টাকা লাভ হতো। কিন্তু চাউল ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে দৈনিক ২০০-৩০০ শ’ টাকা থাকে। এতে করে দুজন মানুষের শ্রমের দাম ওঠে না।
চারু দাশ আরও বলেন, বর্তমানে মুড়ি বিক্রি করে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন পরিবারের অন্যান্য খরচ বাড়ছেই। তবে সেই তুলনায় মুড়ির দাম বাড়েনি।
স্থানীয় ভারতী রানী দাশ বলেন, প্রতিদিন আমরা স্বামীর সাথে মুড়ি তৈরির কাজে সহযোগিতা করি। হাতে তৈরি মুড়ি খেতে সুস্বাদু। বর্তমানে আমাদের হাতে তৈরি মুড়ির বেশ সুনাম রয়েছে। কিন্তু মেশিনে তৈরি ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি অসাধু ব্যবাসীরা সাধারণ মানুষের কাছে হাতে ভাজা পাতার মুড়ি বলে বিক্রি করে। এটা বড় ধরনের একটা প্রতারণা। প্রতারনা কওে ক্রেতাদেরকে ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে। এটা রোধ করা দরকার।
নিরান দাস বলেন, ছোট বেলা থেকে মড়ি তৈরি ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখিনি। বর্তমানে বাজার ভালো না। তারপরও যতদিন বাঁচবো এই কাজ করে যেতে হবে।
বিসিক সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা গাভা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এই পেশাটি চলছে সেই পাকিস্তান আমল থেকে। এখানকার সবাই হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করে থাকেন। তবে বর্তমানে এই শিল্পটি নষ্ট হতে বসেছে। মুড়ি তৈরির কাজে যে চাউল ব্যবহার করা হয় সেটির দাম বৃৃদ্ধিতে তারা সংকটে পড়েছে। কোন সহযোগিতা পেলে তারা উৎপাদন আরও বাড়িয়ে দিতে পারতো।
খুলনা গেজেট/ এসজেড