শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি ও খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ এঁর সঙ্গে বৈঠক করেছে খুলনার বেসরকারি পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ২০০৬ সালের শ্রম আইন মোতাবেক বেসরকারি জুট মিলের কার্যক্রম চালু, শ্রমিক কর্মচারীদের মিল মালিকের নিকট পাওনাকৃত পিএফ, গ্রাইচুটি সহ চুড়ান্ত পাওনা পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এককালীন পরিশোধসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের আশ^াসে শ্রমিকরা পূর্ব ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, যোগিপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন ও বেসরকারী পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান। সহ-সভাপতি মোঃ নিজামউদ্দীন, মোঃ সেকেন্দার আলী, মোঃ লিয়াকত মুন্সি, প্রচার সম্পাদক সাইফুল্লাহ তারেক, শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, আমির মুন্সি, কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, মোঃ রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠকে মিল মালিকদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রম বান্ধব সরকার সুতরাং শ্রমিক ঠকানোর কোন সুযোগ মালিকগোষ্টিকে দেওয়া হবে না।তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে তালিকা করা হচ্ছে কোন কোন মিল মালিক শ্রমিকদের নায্য পাওনা ফাকি দিয়ে শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসরকারি অনেক জুট মিলের মালিকেরা দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ রেখেছে, সে সকল মালিক যদি পুনরায় কারখানা চালু করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। তবে শ্রমিকদের নায্য পাওনা বুঝে দিতে হবে।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, জুটমিল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে সেই টাকা অন্যখাতে ব্যয় করবে আর শ্রমিকরা তাদের পাওনা আদায়ের জন্য বছরের পর বছর ঘুরবে এটা মেনে নেওয়া হবে না।
বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতা গোলাম রসুল খান বলেন, খুলনার বেসরকারি জুট মিলের শ্রমিকরা দির্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে আসছিলো । মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায় আমরা আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি । আমাদেরকে আশ^স্ত করে বলা হয়েছে, যে সকল মালিকেরা শ্রমিকদের সাথে জুলুম করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । ইতিমধ্যে তাদের তালিকাও তৈরী হয়েছে। এ অবস্থায় ঈদের পূর্বে আমাদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, খুলনার আফিল , জুট স্পিনার্স, মহসেন, সোনালী, এ্যাজাক্স জুট মিল ও শিরোমনি হুগলী বিস্কুট কোং শ্রমিক কর্মচারীদের মিল মালিকের নিকট কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে । বছরের পর বছর কারখানা মালিক মিলগুলি বন্ধ রেখেছে। অথচ শ্রমিক এর পাওনা শ্রম আইন মোতাবেক পরিশোধ করছেনা ।
আফিল জুট মিল : আফিল মিলের মালিক মিলটি বিক্রয় করে দিয়েছে হ্যামকো গ্রপের কাছে। শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ, গ্রাইচুটি সহ যাবতীয় পওনাদী শ্রম আইন অনুযায়ি সঠিক বা পুর্ণাঙ্গ হিসাব না দিয়ে মালিকপক্ষ নামমাত্র টাকা দিয়ে জোরপুর্বক শ্রমিক এর কাছ থেকে ষ্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। এখনও মিল মালিকের নিকট ২ হাজার শ্রমিকের ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
জুট স্পিনার্স : শিরোমনি শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিলের ৭ শত শ্রমিকের প্রায় ৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বর্তমানে মিলটি আংশিক চালু থাকলেও মিল মালিকপক্ষ স্থানিয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় মিলটি বিক্রয়ের পায়তারা এবং শ্রমিক ফাকি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
মহসেন : মহসেন জুট মিলের মালিক এর নিকট ৩৬৫ জন শ্রমিক কর্মচারীর প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। মিলটি বন্ধের ৯ বছর অতিবাহিত হলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদী পরিশোধ না করে মিল থেকে রাতের আধারে মালামাল বের করে নিচ্ছে।
সোনালী : মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার সোনালী জুট মিলটি বর্তমানে আংশিক চালু রয়েছে। মিলের তৎকালিন মালিক এর নিকট ২৪’শ শ্রমিক কর্মচারী ৪০ কোটি টাকা পাবে।
এ্যাজাক্স: মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার এ্যাজাক্স জুট মিলটি দির্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ৮ শত শ্রমিকের প্রায় ১৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে মালিকপক্ষের নিকট।
হুগলী বিস্কুট কোং : শিরোমনি বিসিক শিল্প এলাকার হুগলী বিস্কুট কোঃ মালিকের নিকট ১৬২ জন শ্রমিক এর প্রায় আড়াই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ।
খুলনা গেজেট/কেডি