অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে বরসা এনজিও এর হাতিয়ে নেওয়া শতকোটি টাকা ফেরতের দাবিতে সাতক্ষীরা শহরের চায়না-বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে বরসা’র প্রধান কার্যালযের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ)বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান ধর্মঘটের ফলে কোন ক্রেতা পণ্য কিনতে শপিং কমপ্লেক্সে ঢুকতে পারেননি। বেলা তিনটার দিকে কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক কর্তৃক টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ^াসের প্রেক্ষিতে তারা অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি তুলে নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জামানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে সাতক্ষীরার বৃহত্তম শপিংমল চায়না-বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত বরসা প্রধান কার্যালয়ের সামনে ৪ শতাধিক মানুষ অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কমপ্লেক্সের দো-তলায় ঢুকে পড়েছেন। অনেকে আবার সিড়ির ধারে ও ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এসময় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে ও যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে দেখা যায়।
এবিষয়ে অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেওয়া দেবহাটার টিকেট গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, আশাশুনি, শ্যামনগর, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের দশ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছ থেকে কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বরসা এনজিও। এদের মধ্যে কারো ডিম বিক্রির টাকা, কারও বা মুরগী বিক্রির টাকাও রয়েছে। আমরা এ টাকা ফেরতে পাওয়ার দাবি করছি।
কালিগঞ্জের আকলিমা খাতুন বলেন, লাভ দেওয়ার কথা বলে বরসা এনজিও প্রান্তিক মহিলাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা আমাদের জামানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এখন সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় অনেকের সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।
কালিগঞ্জের শারিরীক প্রতিবন্ধী রুহুল আমিন বলেন, আমি প্রতিবন্ধী। আমার স্ত্রী এবং সন্তান ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে ছিলো। পাঁচ বছর আগে বরসা এনজির কর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেখানে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা রাখা হয়েছিল। সেই টাকা আত্মসাতের খবরে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বার বার ওয়দা করেও বরসা এনজিও কর্তপক্ষ আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
দেবহাটার শ্যামনগর গ্রামের প্রজিত মন্ডল জানান, বরসা এনজিও তে আমার দেড় লক্ষ টাকার একটি ডিপিএস রয়েছে। প্রায় ৬ বছর হলো তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখনো আমার টাকা ফেরত দেয়নি। টাকা চাইলে আজ না কাল বলে কালক্ষেপন করছেন কর্তৃপক্ষ।
একই ধরনের অভিযোগ করেন, আড়াই লক্ষ টাকা জামানতকারি আশাশুনির খলিসানির অমর বিশ্বাস, দেবহাটার টিকেট গ্রামের নুরুজ্জামান, সুবর্ণবাদ গ্রামের তাপস কুমার সরকারসহ অবস্থান ধর্শঘটে অংশগ্রহণকারি অধিকাংশ নারী-পুরুষের।
বে-সরকারি সংস্থা বরসার নির্বাহী পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা হবে। এনিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক তারেক ইবনে আজিজ জানান, অবস্থান ধর্মঘট চলাচলে জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছিল। বেলা তিনটার দিকে দেবহাটার কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি এসে সংক্ষুব্ধদের সামনেই জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করেছিলেন। একপর্যায়ে টাকা ফেরত পাওয়ার আশ^াস পেয়ে সংক্ষুব্ধরা বাড়িতে চলে গেছেন।
প্রসঙ্গত,অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের তৃণমুল পর্যায়ের মানুষের কাছ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা বরসা’র বিরুদ্ধে। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুল টাকা ও মুনাফা কোনটাই না পেয়ে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রহাকরা। চলতি বছরের শুরুতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর শাখা কার্যালয়ের সামনে ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন করেন প্রায় ৩ হাজার গ্রাহক।
এদিকে, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চায়না-বাংলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে যেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে তার ভাই আশিকুর রহমান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম