খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯০
  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

দখলে ব্যাহত ময়ূর নদী খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা নগরীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত ময়ূর নদী প্রাণ ফেরাতে শুরু হয়েছে খনন কাজ। প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ডিসেম্বর মাস থেকে এই কাজ শুরু হয়। খননে নদীর প্রাণ ফিরবে, কমবে খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা-এমন প্রত্যাশা ছিলো সবার। কিন্তু নদীর বাঁকে বাঁকে অবৈধ দখল এবং পদে পদে বাঁধার কারণে ব্যাহত হচ্ছে প্রত্যাশিত সেই খনন। এছাড়া খনন কাজের নকশা ও প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি খনন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বিভিন্ন অংশ বাঁশ ও বালুর বাঁধ দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। কিছু অংশে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ও জেলা প্রশাসনের যৌথ জরিপের পর স্থাপনা করা সীমানা খুটি তুলে ফেলা হয়েছে। কিছু এলাকায় খুটি সরিয়ে অন্য স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। এতে মূল নদীর জায়গা ছোট হয়ে গেছে। দখল করা জায়গায় নদী খনন হচ্ছে না।

দেখা গেছে, খননের দ্বিতীয় সেকশনের ত্রিমোহনা এলাকায় পরামর্শক সংস্থার নকশায় নদী রয়েছে ৪২ মিটার প্রশস্ত। ওই অংশে ৪২ মিটারই খননের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই স্থানে নদী রয়েছে ২৬ মিটার। বাকি জায়গায় বাড়ি-ঘর গাছগাছালি। ফলে ২৬ মিটার খনন করেই কাজ শেষ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নদীর সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় বাকি অংশ খনন হয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, শ্মশান ঘাট ব্রিজের এ পাড় থেকে নদীর প্রায় এক কিলোমিটার অংশ খনন করা হয়েছে। বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে ভেকু দিয়ে নদীর মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে খনন কাজের পুরোটাই দৃশ্যমান। শুরু থেকে নদীর প্রশস্ততা ঠিক থাকলেও ত্রিমোহনা এলাকায় এসে নদী সরু হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ত্রি মোহনার নতুন মসজিদের সামনে পরামর্শক সংস্থার নকশায় নদীর প্রশস্ততা ৪২ মিটার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অংশে ২৬ মিটার কাটার পরে দু’পাশে বাড়ি ঘর পড়েছে। বাকি অংশ না কেটেই খনন কাজ সামনে এগিয়ে গেছে।

ত্রি মোহনার সামনে একাধিক স্থানে বাঁশের বাঁধ দিয়ে নদীর জায়গা দখল করে বালু ফেলতে দেখা গেছে। মাহাতাব উদ্দিন সড়কের মাথায়, নদীর অর্ধেকটা জুড়ে বাঁশের বেড়া দিতে দেখা গেছে। ওই অংশে কেসিসির সীমানা খুটি তুলে ফেলা হয়েছে।

নকশা ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন 
নদী খননের আগে নকশা তৈরি করেছে পরামর্শক সংস্থা। নদীর সীমানা এবং বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করে তাদের নকশা তৈরির কথা ছিলো। কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা যাচ্ছে নদীর বাস্তব অবস্থার চাইতে খননের প্রশস্ততা বেশি। অর্থাৎ নকশা তৈরির সময় নদী না দেখে অর্থাৎ বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই এসি রুমে বসে নকশা তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৬ মাস আগে খনন কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই দখল চিহ্নিত এবং সঠিক পরিমাপ করে দখল উচ্ছেদ করা উচিত ছিলো। এছাড়া কাজ শুরুর আগে খনন পূর্বের অবস্থা জরিপ করা হয়। তখন নদী দখলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ এবং উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার কারণে খনন কাজ শুরুর পর মাঝপথে কাজের গতি থমকে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আমিন আহমেদ বলেন, নদীর দুই পাশেই ঘরবাড়ি, মাটি রাখার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে নদীর পাশে যেখানে ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে মাটি রাখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নদীর সীমানা যেটুকু ফাঁকা রয়েছে সেই অংশে নদী খনন হচ্ছে। বাকি অংশে মানুষের ঘরবাড়ি কাটতে গেলেই তারা তেড়ে আসে। এখন কেসিসি নদীর সীমানা চূড়ান্ত এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করে বুঝিয়ে না দিলে বাকি অংশ কাটা কষ্টকর।
তিনি বলেন, নদীতে পেড়ি ও নরম মাটি বেশি। এছাড়া পাড়জুড়ে অবৈধ দখলদার। নদীতে খনন যন্ত্র আনা নেওয়ার জায়গা নেই। এগুলোই খনন কাজে প্রধান অন্তরায়।

কেসিসির জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল ইসলাম বলেন, কেসিসিতে যতো কাজ চলে এর মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে ময়ূর নদী খনন। দেশে অন্য কোথাও বাঁধ দিয়ে নদী শুকিয়ে মাটি কাটা হয় না। এজন্য কিছুটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এগুলো সমাধানের জন্য কাজ চলছে। গত সপ্তাহে নদীর এক অংশের সীমানা মাপা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার অন্য অংশ মাপা হবে। প্রয়োজনে বাকি অংশ পরে কাটা হবে।

কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নদী খনন কাজে গাফিলতি বা বাঁধা সহ্য করা হবে না। নকশা অনুযায়ী নদী খনন করে আমাকে দেখিয়ে দিতে হবে। এরপর বিল পরিশোধ করা হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!