অধ্যাপক আনিসুর রহিম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, শিশু সংগঠক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ ও নাগরিক সমাজের নেতা। সাতক্ষীরায় আধুনিক সাংবাদিকতার নবধারা সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল ব্যক্তি, নিরহংকার ও নির্লোভ মানুষ। একজন সমাজ সংস্কারক।
আনিসুর রহিম মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। সাতক্ষীরা প্রয়াত সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক নেতা আনিসুর রহিম এর নাগরিক স্মরণ সভায় বক্তারা এভাবেই তার নানা গুণের কথা তুলে ধরেন।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
স্মরণসভার প্রধান অতিথি শ্যামল দত্ত বলেন, মো: আনিসুর রহিম একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। আজ যারা একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন তাদের চেয়ে মো: আনিসুর রহিমের যোগ্যতা কোন অংশে কম নয়। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি।
শ্যামল দত্ত বলেন, একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পেলে হয়তো সাংবাদিক আনিসুর রহিমের জন্য কিছু হবে না, কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আনিসুর রহিম যে আলোর পথের বাতি জ্বালিয়ে গেছেন সেই আলোর পথে চলার জন্য তাঁর জীবন ও কর্মকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সমাজকে আলোকিত করতে আনিসুর রহিমের মতো যারা অবদান রেখেছেন তাঁদের খুঁজে বের করে স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অনন্য আনিসুর রহিমকে যাতে রাষ্ট্র সেই স্বীকৃতি দেয় সেজন্য যা যা করা দরকার জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তা করা হবে। এজন্য রাজধানী ঢাকার সাংবাদিকদের সাথে সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের সমন্বয়ে আলোচনা করতে হবে।
স্মরণসভা আয়োজক কমিটির আহবায়ক শেখ আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এবং সাতক্ষীরার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা-স্কাস চেয়ারম্যান এবং রিফিউজি অপারেশন্স অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন টিমের ন্যাশনাল এনজিও বিষয়ক প্রতিনিধি জেসমিন প্রেমা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ, ওয়াটারকিপার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও বাপার কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ নূর আলম শেখ, বিএফইউজের যুগ্ম-মহাসচিব হেদায়েত হোসেন মোল্লা, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি ও লেখক-গবেষক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, পার্লামেন্ট নিউজের উপ-সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, প্রয়াত আনিসুর রহিমের সহধর্মিণী সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. দিলারা বেগম প্রমূখ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা নূরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আ.হ.ম তারেক উদ্দীন, প্রয়াত আনিসুর রহিমের ভাই আহমেদুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশিং কমিটির সভাপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা, কবি ও সাহিত্যিক গাজী শাহজাহান সিরাজ, কবি নাজিমউদ্দিন, সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিলটন, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, স্মৃতি একাত্তরের বৈদ্যনাথ কুন্ডু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল বারী, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক আবু আফফান রোজ বাবু, প্রাক্তন শিক্ষিকা মিনতি চৌধুরী, সাংবাদিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী,অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, নারী নেত্রী জ্যোৎস্না দত্ত, নিত্যানন্দ সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন,ওবায়দুস সুলতান বাবলু, মনিরুল ইসলাম, আলিনুর খান বাবুল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, কমরেড আবুল হোসেন, আব্দুস সাত্তার, ওহাব আলী সরদার প্রমুখ।
এরআগে প্রয়াত আনিসুর রহিমকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও আনিসুর রহিম স্মারকগ্রন্থ ‘অনন্য আনিস’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভূমিহীন আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, জলাবদ্ধতা নিরসনের আন্দোলনসহ সকল ন্যায় ভিত্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুর রহিম। তিনি শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আন্দোলন করেছেন। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে তার জীবন ও কর্ম কে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক আনিসুর রহিম গত ৩ জানুয়ারি স্বজনদের সাথে সুন্দরবন ভ্রমণকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক সাতক্ষীরা চিত্রের সম্পাদক ও দৈনিক পত্রদূতের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক হিসেবে যে কোন সংকটে গুররুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।