জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা অধ্যাপক আবু সুফিয়ানের ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী বুধবার। অধ্যাপক আবু সুফিয়ান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এর স্বামী।
দিবসটি উপলক্ষে খুলনায় মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা, দৌলতপুর, খালিশপুর আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সামাজিক সংগঠন সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৮ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত দিনব্যাপী কোরআন খতম এবং সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে দৌলতপুর মহসিন মোড়ে শহীদ অধ্যাপক আবু সুফিয়ান এর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় দৌলতপুর বেবীস্ট্যান্ড থেকে শোকর্যালি শুরু হয়ে মহসিন মোড় ঘুরে শহিদ অধ্যাপক আবু সুফিয়ান এর কবর প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে।
এরপর কবর জিয়ারত এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। শোকর্যালিতে নেতৃত্ব দেবেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। রেলিগেইট বায়তুল ইলম জামে মসজিদে কোরআন খতম, দোয়া, বিশেষ মোনাজাত এবং তোবারক বিতরণ। ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে দৌলতপুর বেবীস্ট্যান্ড চত্বরে শহিদ অধ্যাপক আবু সুফিয়ান এর স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
৩১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটায় খালিশপুর নতুন রাস্তার মোড়ে আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত এবং সন্ধ্যায় খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় শ্রমিকলীগ আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ০১ জানুয়ারি জাতীয় শ্রমিক লীগের আঞ্চলিক কমিটি আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রমিক নেতা অধ্যাপক আবু সুফিয়ান ১৯৭২ সালের ২৮ ডিসেম্বর খুলনা-যশোর রোডের মহসিন মোড়স্থ ইসলাম ম্যানশনে নিজস্ব অফিসে ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং শেষে বাসায় ফেরার সময় রাত ১০টার দিকে রাস্তার ওপর দুর্বৃত্তদের ব্রাশ ফায়ারে মাত্র ২৯ বছর বয়সে শহিদ হন।
অধ্যাপক আবু সুফিয়ান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডা গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৩ সালের ০১ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে শাহ্ মাখদুম হলের ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধকালীন তিনি পলতা ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন। যুদ্ধের সময় আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে যেসব বাঙালী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন তাদের কাছে পাকিস্তানী সেনা এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল্ সামসদের অত্যাচার, নির্যাতনের কথা শুনে কথিকা তৈরি করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সে কথিকা পাঠ করেন। স্বাধীনতার পর ত্যাগী এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরকার বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খুলনা জেলা শ্রম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে খালিশপুর, দৌলতপুর, আটরা শিল্প এলাকায় ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে ৪২টি ট্রেড ইউনিয়নের কোনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবার কোনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
খুলনা গেজেট/এইচ